ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ১২ জুন ২০২৩ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নানা মেরুকরণ। দীর্ঘ এক দশক পর শনিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ায় তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটিকে প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ দেওয়া নিয়ে সব মহলেই চলছে নানা গুঞ্জন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, জামায়াত নিয়ে বড় দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কৌশলী ভূমিকা পালন করে আসছে। দলটির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা ধীরে চলো নীতিতে তারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে নিয়ে দুই দলের নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা থাকতে পারে। ভবিষ্যতে তা আরও স্পষ্ট হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বড় দুই দলের এমন কৌশলকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে জামায়াত। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি এবং মামলা-হামলার মুখে অনেকটা অন্তরালে চলে যায় দলটি। দীর্ঘদিন তারা প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। তবে নানা কৌশলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঠিকই অব্যাহত রাখে। পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের সামনে রেখে নিয়মিত পুনর্গঠন করা হয় দলটির কেন্দ্রীয়সহ প্রায় সব কমিটি। কেউ কেউ বলছেন, বরং আড়ালে থেকে এই ১০ বছরে ভেতরে ভেতরে জামায়াত সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়েছে। যার প্রমাণ মেলে শনিবারের সমাবেশে। সুসংগঠিতভাবে বড় ধরনের শোডাউন করে জামায়াত রাজনীতির চলমান মেরুকরণে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগের ঘোষিত অবজেক্টিভ হলো-আমরা চাই আগামী জাতীয় নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হোক। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আমাদের ওপর দেশ ও বিদেশ থেকে প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। এখন তাদের (জামায়াতকে কর্মসূচি পালন) না করতে দিলে আমাদের ওপরই ব্লেম আসবে। ফলে আমরা চাই-গণতান্ত্রিকভাবে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাদেরই আমরা সুযোগ দেব।’
জামায়াতে ইসলামী নিয়ে আওয়ামী লীগের আদর্শগত অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াত তো আমাদের সঙ্গে নির্বাচন করবে না। তারা যদি তাদের মতো নির্বাচন করতে চায়, সেটা করতে পারে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতকে নিয়ে কৌশলে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। ফলে অনেকটা ধীরে চলো নীতিতে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে জামায়াতে ইসলামীকে হাতে রাখতে চায় তারা। তবে জামায়াত নিয়ে ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীনদের অবস্থান কী হবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। একই কারণে জামায়াত নিয়ে আওয়ামী লীগের শরিকরাও নিশ্চুপ।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, সরকার সুচিন্তিতভাবেই এটা দিয়েছে। তবে তাদের এই কাজ আত্মঘাতী।’
Advertisement
একই বিষয়ে জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, তারা যদি একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চায় এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধশীল হয়, তাহলে তো তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি চালাতেই পারে।’
অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, এ ব্যাপারে বিএনপিও কৌশলী ভূমিকা পালন করে আসছে। দীর্ঘদিন জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন ও আন্দোলন করে দলটি। স্বাধীনতাবিরোধী দলটির সঙ্গে সখ্য নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দলটিকে। তাদের সঙ্গ ছাড়তে বাড়ে দেশি-বিদেশি চাপ। কিন্তু এক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করে হাইকমান্ড। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ করে জামায়াতের সঙ্গ না ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে নেওয়া হয় নয়া কৌশল। এ কৌশলের অংশ হিসাবেই ভেঙে দেওয়া হয় ২০ দলীয় জোট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, ‘জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি তো বিএনপি দেয়নি। দিয়েছে সরকার। তাহলে আমরা কীভাবে তাদের মাঠে নামালাম। বিএনপির ঘাড়ে দায় চাপানোর পুরোনো কৌশল হিসাবেই তারা এসব কথাবার্তা বলছে।’ তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। এখন একই দাবিতে অন্য কোনো দল কর্মসূচি দিলে আমরা তো না করতে পারি না। এটা ওই দলের নিজস্ব ব্যাপার।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের যুগান্তরকে বলেন, ‘সিনিয়র নেতাদের ফাঁসি ও মামলা-হামলার কারণে আমাদের কঠিন সময় অতিক্রম করতে হচ্ছে। প্রকাশ্যে রাজনীতির অনুমতি না পেলেও নানা কৌশলে আমরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে কোনো আঁতাত হয়নি, সেটা তো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যেই প্রমাণিত। তাছাড়া এ সরকারের সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা জনগণের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছি। সরকার যদি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার মেনে নেয়, তাহলে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু দাবি না মানলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করা হবে। তবে জামায়াতের কর্মসূচি নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে ফায়দা নিতে না পারে, এ ব্যাপারে আমরা বেশ সতর্ক। কোনো ফাঁদেই আমরা পা দেব না।’