বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র ফাঁস!(ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ১২ জুন ২০২৩ : মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে ইদানীং নানা মহলে নানারকম আলোচনা চলছে। একদল বলছেন এটা বন্ধ করে দেওয়া হউক, আরেক দল বলছেন না এগুলো সরকারি করা হউক। আরেক দল বলছেন এগুলোর উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিৎ। টাকা পয়সা সরকার না দিলেও একটা দেশের অভ্যন্তরে কে কী করছে, কার জন্য করছেন তা দেখার, জানার অধিকার সরকারের আছে। কেউ যদি বলেন না আমি আমারটা দেখাবো না, তাহলে উনি রাষ্ট্রকে মানেন না, তিনি ব্যবসা, বাণিজ্য, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ যাইই চালান না কেন। যাই হউক যেটা নিয়ে শুরু করেছিলাম মাদ্রাসা শিক্ষা। আসুন আমাদের এই উপমহাদেশে কিভাবে মাদ্রাসা শিক্ষা এলো, কারা নিয় এলো, কখন, কী কারণে, তার ফল কী হলো জানার চেষ্টা করি?

Advertisement

মাদ্রাসার শিক্ষার ইতিহাস বলে, ইংরেজ উপনিবেশ আমলে, ১৭৮০ সালে বাংলার ফোর্ট উইলিয়ামের গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিসং কলকাতায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ইংরেজ শাসনের প্রাথমিক পর্বে প্রশাসন পরিচালিত হতো প্রচলিত ফার্সি ভাষায় রচিত আইন অনুসারে। এ কারণে প্রশাসনের জন্য, বিশেষ করে বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজন ছিল আরবি, ফার্সি ও বাংলা ভাষায় দক্ষতা সম্পন্ন মানুষ। এ ছাড়া মুসলিম আইনের ব্যাখ্যা ও মামলায় রায় দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক মৌলবি ও মুফতির। একই সঙ্গে মৌলবি ও মুফতিদের ইংরেজি ভাষায় জ্ঞান থাকারও প্রয়োজন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস মুসলমানদের জন্য একটি মাদ্রাসা ও হিন্দুদের জন্য একটি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

Advertisement

১৭৮১ থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত আলিয়া মাদ্রাসা ‘বোর্ড অব গভর্নরস’ দ্বারা এবং ১৮১৯ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ইংরেজ সেক্রেটারি ও মুসলমান সহকারী সেক্রেটারির অধীনে ‘বোর্ড অব গভর্নরস’ দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৮৫০ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের পদ সৃষ্টি হলে ড. এ. স্প্রেংগার মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৮৫০ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ইংরেজ কর্মকর্তাগণ এ পদ অলংকৃত করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ১৪৭ বহর পরে ১৯২৭ সালে শামসুল উলামা খাজা কামালউদ্দীন আহমদ সর্বপ্রথম এ মাদ্রাসায় মুসলমান অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

কলকাতা মাদ্রাসা শুরু থেকেই প্রখ্যাত আরবি স্কুল ‘দারসে নিযামিয়া’র মডেল অনুসরণ করে পাঠদানের কোর্স প্রণয়ন করে। ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসার পাঠক্রমে ফার্সি ভাষা মুখ্য স্থান দখল করে। ত্রৈরাশির দ্বৈত নিয়ম অর্থাৎ অনুপাত ও সমানুপাত পর্যন্ত গণিত শেখানো হতো, এবং ইউক্লিডের শুধু একটি পাঠ পড়ানো হতো। অ্যারিস্টটলের পুরনো দার্শনিক মতের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা যুক্তিবিদ্যা ও দর্শনের কোর্সসমূহ পড়ানো হতো।

১৮২৯ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় ইংরেজি বিভাগ খোলা হয়। ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৩৪ বছরে এ বিভাগে ১৭৮৭ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন। এঁদের মধ্যে নওয়াব আবদুল লতিফ ও সৈয়দ আমীর আলী বিশেষ কৃতিত্ব লাভ করেন। ১৮৬৩ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় এফ.এ পর্যায়ের ক্লাস সংযোজিত হয়। ১৮৫৪ সালে মাদ্রাসায় একটি পৃথক ইন্সটিটিউট হিসেবে ইঙ্গ-ফারসি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮২১ সালে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মাদ্রাসায় প্রথাগত পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়।

১৯৪৭ সালে আলিয়া মাদ্রাসা কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। ঢাকায় আলিয়া মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন খান বাহাদুর মাওলানা জিয়াউল হক। ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে, হয়ে ১৯৫৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকার বকশীবাজারে মাদ্রাসার চারতলাবিশিষ্ট নতুন ভবন ও ছাত্রাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৬১ সালে মাদ্রাসা লক্ষ্মীবাজার থেকে বকশীবাজারে স্থানান্তরিত হয়। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন খান বাহাদুর মাওলানা জিয়াউল হক।

অন্যদিকে কওমি মাদ্রাসা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত ও দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ, মূলনীতি ও মত-পথের অনুসরণে মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় উলামাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইলমে ওহীর শিক্ষাকেন্দ্র। এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত।

এ ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দে “আল জামায়াতে ইসলামিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ” নামে। ইংরেজদের সাথে লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে নিজেদের কওমের লোকদের ধর্মীয় শিক্ষাদান ও নিরাপদে রাখার জন্য এই মাদ্রাসা পরিচালনা করা হতো। কওমি মাদ্রাসাগুলো সাধারণত সরকারি আর্থিক সহায়তার পরিবর্তে মুসলিম জনসাধারণের সহায়তায় পরিচালিত হয়। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা বহুল প্রচলিত।

Advertisement

ভারতবর্ষ তথা বাংলায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ইসলামী শিক্ষাই শুধু নয়, এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য সরকারকে সাহায্য করা। কিন্তু কওমি  মাদ্রাসার নামে বাংলাদেশে যা হচ্ছে তাঁর উপর সরকারের নজরদারী জরুরী। নীতিগতভাবে কওমি মাদ্রাসা চালু করা হয় দেশের একটি অঞ্চলের বিশেষ একটি কওমের বা গোষ্ঠীর জন্য। তাই ধর্ম সম্পর্কে মাদ্রাসার হুজুরদের ব্যাখ্যাকেই কওমের মানুষেরা সহি মনে করেন।  যেহেতু পবিত্র কোরআনকে পরিবর্তন সম্ভব নয় কারণ তাঁর ছিল শত শত হাফেজ (মুখস্থের মাধ্যমে হেফাজত কারি), তাই অপারেশন চলে হাদিসের উপর।

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র সজল রওশন, যিনি আরবি ইংরেজি ও বাংলায় প্রায় সমান দক্ষ,  পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানের সাথে মাস্টার্স ও ডক্টরেট করার শেষ প্রান্তে আমেরিকায় চলে যান জীবন জীবিকার তাগিদে। তিনি দেখিয়েছেন যে, কিভাবে পবিত্র কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক  লক্ষ লক্ষ জয়ীফ ও জাল হাদিস তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর নানাবিধ স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। তাঁর বই বাংলাদেশের বাজারেও পাওয়া যায় অনলাইনে। এছাড়া তাঁর ইউটিউব চ্যানেলেও জানা যায় তাঁর বক্তব্য। কোরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে। এটি মূল আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়। কিন্তু হাদিসের সংখ্যা এতোই বেশী যে তা উল্লেখ কেউ করেন না। মহানবীর ওফাতের প্রায় ২০০ বছর পরে লেখা শুরু করা হাদিস মনে হয় এখনো তৈরি করা হয়, যার অধিকাংশই  জাল বা জয়ীফ হাদিস। মজার ব্যাপার হলো,  নিজ নিজ কওমের (মাজহাবের) সবাই তাঁদের কওমের হাদিস নিয়েও একমত হতে পারেননা। তবুও সেখানে পবিত্র কোরআনের চেয়ে হাদিসের প্রাধান্যই বেশী। তাহলে কি ‘আমের চেয়ে আমের আটি বেশি বড়’? তাই পবিত্র কোরআনের চেয়ে হাদিসের উপর বেশী ঝোঁক শ্রেণির আলেম, হুজুরের।

কওমি মাদ্রাসা নিয়ে পড়তে পড়তে গিয়ে দেখি ‘কওম’ আরবি শব্দ। এর অর্থ গোষ্ঠী, গোত্র, জাতি, সম্প্রদায়, জনগণ। বাংলাদেশে এই কওমির অর্থ এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের  কওম বা গোষ্ঠী। তাঁরা সাধারণ ধর্মভীরু অসহায় দরিদ্র মানুষর বিশ্বাসকে পুঁজি করে বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বা পাকিস্তান মডেলের রাষ্ট্র বানাতে চায়। তাই তো হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে ৩০ ভাগ জামায়াত, ৩০ ভাগ আফগান ফেরত মুজাহিদ যোদ্ধা, আর ৪০ ভাগ স্বাধীনতা বিরোধী ইসলামী দলের নেতাদের সংমিশ্রণ। তাই তাঁদের নিজ নিজ গোত্র সম্প্রদায় ভেদে ইসলামের চর্চার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। কারণ এটা জনতার বা জনগণের জন্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। এটা আওয়ামী মানে জনগণের মাদ্রাসা নয়। যে যাই বলুক না কেন, আলিয়া মাদ্রাসার মত সব কওমি মাদ্রাসাকে এক সিলেবাসের আওতায় আনতে হবে, যা হতে হবে আধুনিক, এটা সময়ের ও বাস্তবতার দাবি। এটা হবে আরবি ভাষায় ইসলাম ও বিজ্ঞান শিক্ষার  আধুনিক প্রতিষ্ঠান। যেটা বর্ত্তমান সরকার দেরিতে হলেও শুরু করেছে। আমাদের দেশে তো ইংরেজি মাধ্যমের ক স্কুল চালু আছে! অসুবিধা কী? শুধু দরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, যদি তাঁরা কার কাছ থেকে মাদ্রাসার জন্য, মাদ্রাসায় থাকা এতিমদের জন্য টাকা পয়সা বা অন্য সাহায্য নেন, তাহলে তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতেই হবে।

গ্রেফতার হওয়া হেফাজত নেতারা পুলিশের কাছে ভয়ঙ্কর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তারা বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনায় এগুচ্ছিলো। ইদানীং তাঁরা সারা দেশের ওয়াজ মহফিল নিয়ন্ত্রণে করেছে। সেকারণে ইসলামী জলসার নামে হয় দেশ ও সরকার আর নারীদের নিয়ে নোংরা কথার হুংকার, সেখানে ইসলামর কথা, পবিত্র কোরআনের কথা থাকে খুব সামান্য। এমতাবস্থায়, দেশ ও ইসলাম বাঁচাতে, আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে, দেশের এতিম ও গরীব শিশুদের নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা ও ব্যভিচার বন্ধ করতে, কওমি মাদ্রাসা সহ অন্যান্য মাদ্রাসা আর জামায়াত শিবির নিয়ন্ত্রিত শিক্ষালয়ের দিকে সরকারের নজরদারী কঠোর করতে হবে স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে। মাদ্রাসা পড়ুয়া দেশের এই বিরাট জনসংখ্যাকে আমরা দেশ প্রেমিক আধা অক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে না পারলে তাঁদের শিল্প কারখানায় কাজে লাগানো যাবে না। তা না হলেও খুব শীঘ্রই প্রতিটি পরিবারে একটি করে কওমি মাদ্রাসা তৈরি হবে, যা হবে বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানানোর একেকটা ছোট ছোট দুর্গ, তা হতে দেওয়া যাবে না।