ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বরিশাল প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩ : সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে হারাতে হাতপাখার মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীমকে ৩ কোটি টাকা দিয়েছেন বরিশাল আওয়ামী লীগের অভিভাবক! ঢাকায় বসে এ লেনদেন হয়েছে।
গতকাল রোববার ফেসবুক লাইভে এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বরিশাল সিটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিছুর রহমান। তাঁর এ বক্তব্যকে শতভাগ মিথ্যা আখ্যা দিয়ে তাঁকে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে সাময়িক বরাখাস্ত করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনেও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন আনিছুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়েরের অনুসারী।
Advertisement
বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন দল এবার আবুল খায়েরকে প্রার্থী করেছে। তিনি সাদিক আবদুল্লাহর চাচা। মেয়র সাদিক বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি নিরীক্ষা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। বরিশাল-১ আসনের এমপি আবুল হাসানাত বঙ্গবন্ধুর ভাগনে এবং ১৫ আগস্টের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে।
বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে হাসানাত পরিবারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আবুল খায়েরের নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন, সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ায় হাসানাত পরিবার নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নয়। তাদের অনুগতরা আওয়ামী লীগকে হারাতে চাইছে।
স্থানীয় রাজনীতিতে সাদিক আবদুল্লাহর বিরোধী হিসেবে পরিচিত আনিছুর রহমান একই অভিযোগ করেছেন। লাইভে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন না ঢাকায় বইস্যা হাতপাখারে ৩ কোটি টাকা দেছে এবং প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে আমাদের ১০ জনের (মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ১০ কাউন্সিলর) বিরুদ্ধে ৩ জন করে প্রার্থী সেট করছে। ৩০ লাখ টাকা অলরেডি পেমেন্ট অইয়া গ্যাছে, দেছে বরিশালের অভিভাবক। এর মধ্যে কোনো মিথ্যা নাই, আমার সাড়ে ৩ হাত জায়গা, আমার কোনো ভয় নেই। এখনও নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’
হাসানাত আবদুল্লাহর অনুসারীরা তাঁকে বরিশালের অভিভাবক হিসেবে সম্বোধন করেন। তবে ফেসবুক লাইভে দেওয়া বক্তব্য থেকে পরে সরে আসেন আনিছুর রহমান। তিনি সমকালকে বলেছেন, এই কথা বলেননি। তাঁর কণ্ঠ এডিট করে ওই বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল করা হয়েছে। তবে এর আগে সংবাদ সম্মেলনে আনিছুর বলেছিলেন, ‘ওপরে নৌকার ব্যাজ, নিচে হাতপাখার ব্যাজ লাগিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চাওয়া হচ্ছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, আনিছুর রহমান মিথ্যা কাল্পনিক অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগের সত্যতা নেই। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাঁকে রোববার গভীর রাতে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আনিছুর বলেছেন, ‘আমি জন্মসূত্রে আওয়ামী লীগ। দলে পদ থাকলেও আছি, না থাকলেও আছি।’
রোববার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধান গবেষণা সড়কে সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত কাউন্সিলর প্রার্থী শাফিন মাহমুদের সমর্থকদের সঙ্গে আনিছুর রহমানের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এরপরই তিনি লাইভে এসে হাতপাখাকে টাকা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন হাসানাত পরিবারের বিরুদ্ধে।
দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও আনিছুর রহমানের পক্ষ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। নৌকার নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য লস্কর নুরুল হক বলেন, ‘সব ভুলে গিয়েঐক্যের পথে হাঁটছিলাম। এমন সময়ে এই বহিষ্কারাদেশ নিজেদের মধ্যে আরেকটি ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করল। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ বিষয়টি আপাতত এড়িয়ে যেতে পারত।’
Advertisement
২০২১ সালে মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেন আওয়ামী লীগের ১০ কাউন্সিলর। তাঁরা যোগ দেন স্থানীয় রাজনীতিতে মেয়রের বিরোধী হিসেবে পরিচিত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে। এবারের নির্বাচনে এই ১০ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সাদিক অনুসারীরা প্রার্থী হয়েছেন। সাদিকবিরোধী কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ সমকালকে বলেছেন, ১০ কাউন্সিলরকে হারাতে সাদিকপন্থি প্রার্থীদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। তারা গোপনে হাতপাখার জন্য ভোট চাইছে।