,ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া প্রতিনিধি,শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩ : সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। মামা স্বভাবে রাগী আর দুষ্টু হলেও ভাগ্নে একদম শান্ত আর কোমল। তবে, এ সম্পর্ক কোনও মানুষের নয়, বলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি ষাঁড়ের কথা।
আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী গ্রামের সবুজ গোলদার নিজ বাড়িতে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় দুটি বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন।
মামা ষাঁড়টির ওজন ১ হাজার ৪০ কেজি, আর ভাগ্নের ৯৬০ কেজি। এরই মধ্যে, মামা-ভাগ্নের দাম উঠেছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। তবে, ১৯ লাখ হলে বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন ষাঁড়ের মালিক।
শুক্রবার (২ জুন) সবুজ গোলদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ষাঁড় দুটি দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। অনেকেই ষাঁড়ের ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে ব্যস্ত ছিলেন।
জানা যায়, সাড়ে তিন বছর আগে সবুজ গোলদারের পালিত দুটি গাভী থেকে জন্ম নেয় অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের এই দুটি ষাঁড়। পরে এদের নাম দেওয়া হয় মামা-ভাগ্নে। পরম যত্নে ষাঁড় দুটি লালনপালন করে আসছেন সবুজ গোলদার, তার ছেলে সৌরভ গোলদারসহ পুরো পরিবার।
মামা দুষ্টু প্রকৃতির হলেও ভাগ্নে কোমল আর শান্ত। প্রায় ৭ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট উচ্চতার ১ হাজার ৪০ কেজি ওজনের কালো রঙের ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে মামা। আর ৭ ফুট লম্বা ও সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতার কালো লালচে রঙের শান্ত প্রকৃতির ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ভাগ্নে।
কোনও প্রকার ওষুধ ছাড়া খড়, ঘাস, রান্না করা খিচুড়িসহ দেশীয় খাবার খাইয়ে ষাঁড় দুটি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতি বেলায় ৪ কেজি দানাদার খাবার, ২ আটি ঘাস ও খড় খায় ষাঁড় দুটি। প্রতিদিন দুটি ষাঁড়ের পেছনে খাবার বাবদ খরচ হয় ১৪০০ টাকা।
এর মধ্যে, মামার দাম ৯ লাখ ও ভাগ্নের দাম ৭ লাখ টাকা বলা হলেও বিক্রি করেননি ষাঁড়ের মালিক সবুজ গোলদার। তিনি বলেন, মামার দাম ১০ লাখ ও ভাগ্নের দাম ৯ লাখ টাকা হলে বিক্রি করব।
পাশের গ্রাম থেকে ষাঁড় দেখতে আসা রানা ফকির বলেন, ‘সবুজ গোলদার দুটি বড় ষাঁড় তৈরি করেছেন শুনে দেখতে এসেছি। এখন পর্যন্ত জেলায় এতো বড় ষাঁড় দেখিনি। মোবাইল ফোনে ছবি তুলে রেখেছি। সবাইকে দেখাবো বলে।’
বান্ধাবাড়ী গ্রামের জাহিদ শেখ বলেন, ‘আশপাশের কোনও গ্রামে এর থেকে বড় ষাঁড় নেই। ষাঁড় দুটি সাড়া ফেলে দিয়েছে। অনেকেই দাম জিজ্ঞেস করছেন, এখন পর্যন্ত ১৬ লাখ টাকা দাম উঠেছে।’
সৌরভ গোলদার বলেন, ‘ষাঁড় দুটি জন্মের পর থেকেই আমি ওদের মাঠে নিয়ে গিয়ে ঘাস খাইয়েছি। সাড়ে তিন বছর ধরে ওদের দেখভাল করছি। এখন এতটাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে, যে ওদের পিঠে উঠলেও কিছু বলে না। ষাঁড় দুটি বিক্রি করলে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগবে আমার। কারণ ওদের সঙ্গে থাকতে থাকতে একটা মায়া হয়ে গেছে।’
সবুজ গোলদারের স্ত্রী বলেন, ‘আমি ওদের নিজের সন্তানের মতো লালনপালন করেছি। নিজের সন্তানদের সঙ্গে ওদের খিচুরি রান্না করে খাইয়েছি। বিক্রি করায় খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। টাকার প্রয়োজন।’
ষাঁড় দুটির মালিক সবুজ গোলদার বলেন, ‘ছোট থাকতেই প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে ষাঁড় দুটি বড় করছি। ওদের গোসল করাতে ৮-১০ জন লোকের প্রয়োজন হয়। তবে আমার ছেলে থাকলে ও একাই করতে পারে। আমার ছেলের সঙ্গে ওদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদে মামা-ভাগ্নের দাম উঠেছিল ১৫ লাখ টাকা কিন্তু বিক্রি করিনি। ১৯ লাখ টাকা দাম পেলে বিক্রি করব।’
ষাঁড় দুটি বিক্রি করলে খারাপ লাগবে জানিয়ে সবুজ আরও বলেন, ‘নিজের সন্তানের মতো লালনপালন করেছি। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে ওদের বিক্রি করতে হবে।’
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোবিন্দ চন্দ্র সরদার বলেন, ‘আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী গ্রামের সবুজ গোলদার দুটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে, একটার ওজন ২৬ মণ আর একটার ওজন ২৪ মণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে ষাঁড় দুটিকে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। সাড়া ফেলে দেওয়া এই ষাঁড় দুটি বিক্রি করে তাদের আর্থিক সংকট কেটে যাবে আশা করছি।’