স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ গুম, কানাডা থেকে পুলিশকে ঘুষের প্রস্তাব পলাতক স্বামীর (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩ : সাড়ে তিন মাস আগেই কানাডা থেকে দেশে আসেন আশরাফুল ইসলাম ও আফরোজা দম্পত্তি। স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছিলেন রাজধানীর দক্ষিণখানের নিজ বাড়িতে। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে বেশ আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিলেন তারা।

এরই মধ্যে ঘটে যায় চাঞ্চল্যকর ঘটনা। পারিবারিক কলহে গত শুক্রবার বটি দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে কানাডা পালিয়ে যান আশরাফুল। এমনটাই অভিযোগ করেছেন আফরোজার স্বজনরা।

Advertisement

আফরোজার বাবা বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি এলাকায়। তিন ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। আফরোজা প্রায় ৫ বছর ধরে কানাডায় থাকেন। প্রথম সংসার ভেঙে যাওয়ার পর বছরখানেক আগে আশরাফুলকে বিয়ে করেন। প্রথম সংসারে আফরোজার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। আশরাফুলেরও প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। সেখানে তার এক ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পরে লাইলি-মজনুর মত প্রেম ছিল তাদের মধ্যে। আমাদের তো সেটাই তারা দেখিয়েছিল। এত বিভেদ সেটা কখনই আমাদের তারা বুঝতে দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, সবশেষ শুক্রবার সকালে মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। দাঁত দেখাতে শনিবার একটি হাসপাতালে তার যাওয়ার কথা ছিল। গ্রাম থেকে এসে ওই হাসপাতালে পৌঁছে মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে, এমন কথা হয়। তবে শুক্রবার রাতে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম। পরদিন কমপক্ষে ৩০ বার ফোনে কল করলেও কেউ রিসিভ করছিল না। এর পর ভয় পেয়ে যাই। শনিবার ঢাকায় পৌঁছে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি দক্ষিণখানে যাই। বিয়ের পর কখনও দক্ষিণখানে জামাইয়ের বাসায় তাঁর যাওয়া হয়নি। শনিবারই প্রথম ওই বাসায় পা রাখি। ১৩ হাজার টাকার মিষ্টিসহ নানা জিনিস নিয়ে যাই। মেয়ের সন্ধান জানতে চাইলে ওই বাসার লোকজন কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। এর মধ্যে জানতে পারি, জামাই মেয়েকে ঢাকায় ফেলে রেখে কানাডায় চলে গেছে। পরে জামাইকে ফোন করলে সে বলে, কয়েক দিন পর আফরোজাকে আনা হবে। অসংলগ্ন সব কথাবার্তা বলছিল। একবার বলে, বনানীর এক বাসায় মেয়েকে রাখা হয়েছে। এর পর থানায় জিডি করি।

বুধবার (৩১ মে) রাতে রাজধানীর দক্ষিণখানে স্বামীর বাড়ির আঙ্গিনা থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্ত করতে নেমে লোমহর্ষক তথ্য পায় পুলিশ।

জানা যায়, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দক্ষিণখানের নিজ বাসার ভেতরে আফরোজাকে কুপিয়ে হত্যা করে বাসার সামনেই মাটির নিচে পুঁতে রাখেন স্বামী আশরাফুল। এর পর শনিবার কানাডা পালিয়ে যান তিনি। দেশ ত্যাগ করার সময় স্ত্রীর মোবাইল ফোনও সঙ্গে নিয়ে যান। গতকাল মধ্যরাতে দক্ষিণখানের সেই বাড়ি থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। যেখানে লাশ পুঁতে রাখা হয় তার ওপর বালু দিয়ে ঢাকা ছিল, যেন কেউ বুঝতে না পারে। মরদেহ চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে একটি গর্তে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ঘটনা জানার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্য দক্ষিণখানে যায়।

হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ১৫ লাখ টাকাসহ কানাডার ভিসা দেয়ার প্রলোভন দেখান আফরোজার শ্বশুড় বাড়ির লোকজন এমন দাবি তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই রেজিয়া খাতুনের।

তিনি বলেন, জিডি হওয়ার পরপরই কয়েক দফা দক্ষিণখানের বাসায় যান। বাসার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পুলিশের এ কর্মকর্তা টোপ দেন– যদি আশরাফুল বা পরিবারের কেউ আফরোজাকে হত্যা করে থাকে, তাহলে তাদের বাঁচিয়ে দেবেন তদন্ত কর্মকর্তা। প্রয়োজনে লাশ লুকিয়ে ফেলা হবে। এক পর্যায়ে তারা স্বীকার করে। কানাডা থেকে ফোন করে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন আশরাফুল। বাসার সীমানা প্রাচীরের ভেতরে লাশ গুমের কথাও জানান। এর পর ভিডিও কলের মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তা রেজিয়ার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ করেন ঘাতক। কানাডা থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষের প্রস্তাব দেন তাঁকে। নগদ ১৫ লাখ টাকা ও পরিবারের দুই সদস্যকে খরচ দিয়ে কানাডায় নেওয়ার কথা জানান। এমন প্রস্তাব দিয়ে লাশটি অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করেন কানাডা প্রবাসী আশরাফুল।

Advertisement

রেজিয়া আরও জানান, স্বামী-স্ত্রী দেশে ফেরার পর এক কোটি টাকার কাবিন হয়েছিল। এর আনুষ্ঠানিকতা হয়েছিল আফরোজার গ্রামের বাড়িতে। কাবিনের টাকার অঙ্ক নিয়ে নাখোশ ছিলেন আশরাফুল। এর পর থেকে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকত। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে দক্ষিণখানের বাসায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে দা দিয়ে কুপিয়ে ঘরের ভেতরে স্ত্রীকে হত্যা করে নিজ বাসার সীমানা প্রাচীরের ভেতরে লাশ গুম করে রাখেন। পরদিন মেয়েকে নিয়ে দেশ ছাড়েন।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আফরোজার শশুড়সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের আটক করে পুলিশ।

উত্তরা বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, যেহেতু বাড়ির ভিতরের ঘটনা সেহেতু অবশ্যই প্রত্যক্ষদর্শী আছে। যেখানে পুতে রাখা হয়েছিল, সেই জায়গাতেও বালি দেয়া হয়েছে একদিন আগে। এ থেকেই বোঝা যায় এ খুনের ব্যপারে তার পরিবারও অবগত রয়েছে।

Advertisement

এক বছর আগে কানাডায় ভালোবেসে সংসার জীবন শুরু করেছিলেন আশরাফুল ও আফরোজা দম্পত্তি।