অপহরণ চক্রের হোতা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কক্সবাজার প্রতিনিধি,শনিবার, ২০ মে ২০২৩ : কক্সবাজারে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় সিন্ডিকেটের হোতা পুলিশের বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক ইকবাল পারভে ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় তাদের আস্তানা থেকে এক নারীসহ পাঁচ জনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিপণ আদায়ের পাশাপাশি স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে অপহৃত নারীকে ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে।

শনিবার (২০ মে) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী।

Advertisement

 

গেপ্তাররা হলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ মাইতুল সরকারবাড়ি এলাকার মৃত এরশাদ আলমের ছেলে পুলিশের বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক এসএম ইকবাল পারভেজ (৪০), কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়ার মো. ইউনুসের ছেলে এমটি মুন্না (৩০), মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মো. ইউসুফ।

সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, কক্সবাজার কেন্দ্রিক অপহরণ সিন্ডিকেটের অবস্থান শনাক্তের পর একের পর এক তাদের গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে সেখানে বন্দি নারীসহ পাঁচ অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের হোতা, পুলিশের বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম ইকবাল পারভেজসহ চক্রের তিন সদস্যকে। কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় রাতভর এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তিনি জানান, ১৬ মে কক্সবাজার বেড়াতে এসে নিখোঁজ হন ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম। পরবর্তীতে মোবাইল নম্বর হতে কল করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও মুক্তি মেলেনি শাহজাহান ও মঞ্জুরের। কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরও করুণ। দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকেন চক্রের সদস্য। স্বামীর উপর চলতে তাকে মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতন।

Advertisement

মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, অপহৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরা বিকাশে দুই লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাদের ছাড়া হয়নি। বেদম মারধরের পাশাপাশি চাহিদামতো মুক্তিপণ না দিলে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। স্বজনেরা বিষয়টি র‍্যাবকে অবহিত করলে গোয়েন্দা উপাত্ত ব্যবহার করে তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে র‍্যাব। এ সময় সেখান থেকে জিম্মি হিসেবে বন্দি পাঁচ নারী-পুরুষ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারের পর র‍্যাব ও স্থানীয় জনতার সম্মুখে স্বামী-স্ত্রী অভিযোগ করেন যে, তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পাশাপাশি স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণও করা হয়।

চক্রের প্রধান ইকবাল পারভেজ ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ র‍্যাবের কাছে ধরা পড়েন। এতে দীর্ঘদিন কারাভোগের পাশাপাশি চাকরিও হারান তিনি। চাকরি থেকে বরখাস্ত ও কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ইকবাল তার শ্যালক মুন্নাসহ অন্য ৭/৮ জন সহযোগী নিয়ে গড়ে তোলেন অপহরণ বাণিজ্যের রমরমা এ সিন্ডিকেট।

 

চক্রের সদস্যরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার আসা মানুষদের টার্গেট করে অপহরণ করে তাদের স্বজনদের কাছে ফোন করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করতেন। প্রত্যাশা মাফিক টাকা না পেলে তাদের দিনের পর দিন আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন কর হতো। আটক অবস্থায় অপহৃত নারীদের যৌনদাসী হিসেবেও ব্যবহার করতেন তারা।

আসামি ও উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।