ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি,সোমবার, ০৮ মে ২০২৩ : গত ২৭ এপ্রিল কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ি ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে পারফর্ম করতে উঠে মাতলামো এবং অসংলগ্ন আচরণের কারণে এখন আলোচনা-সমালোচনায় মাইনুল আহসান নোবেল। এ ঘটনার কয়েকদিন পরই তাকে চূড়ান্ত তালাক দেন তার স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ। সম্প্রতি নোবেলের সঙ্গে প্রেম, বিয়েবিচ্ছেদ ও অন্যান্য বিষয়ে চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন সালসাবিল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহজাদা সেলিম রেজা
✪ নোবেলের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু কীভাবে?
প্রথমে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সারেগামাপা শেষের পর তখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিল সে। সেখান থেকে দেশে আসার পর বলে, ‘আমি এভাবে থাকতে চাই না। তুমি আমাকে বিয়ে করবে কিনা?’ এভাবে সে প্রপোজ করে। তারপর দু’জনে সিদ্ধান্ত নেই। এরপর আমাদের বিয়ে হয়।
✪ বিয়েটা কি পারিবারিকভাবে ছিল এবং এরপর অধ্যায়গুলো কেমন ছিল?
বাসায় যখন নোবেলকে পছন্দের কথা বলি, পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি মেনে নেয়নি। আমার ফ্যামিলি ইসলামিক মাইন্ডের, কিছুটা কনজারভেটিভ টাইপের। ওইদিকে নোবেল বিয়ের জন্য প্রেশার দিচ্ছিল। নোবেলের বাসায় ওর মা-বাবা ছিল। ওদের বাসাতেই বিয়ে হয়। সেখানে আমার ফ্যামিলির কেউ ছিল না। কারণ, আমার ফ্যামিলি তো বিয়ে মেনে নিতে চায়নি, একজন শিল্পীকে বিয়ে করব তাই। ইসলামিক দিক থেকে আমার ফ্যামিলি মেনে নিচ্ছিল না।
✪ নোবেলকে ডিভোর্স দিয়েছেন, লেটার গ্রহণ করেছে সে?
বান্দরবান ঘটনার পর ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিলাম। এরপর দু’জনেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখি। সে আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, নেশা বা এসব থেকে বের হয়ে আমাদের নতুন কিছু হবে। ভালোভাবে, সুন্দরভাবে আবার শুরু করব। কিন্তু সেটা যেহেতু হয়নি, সাম্প্রতিক ঘটনার পর তাই আমার আইনজীবীকে ডিভোর্সের বিষয়টি কমপ্লিট করতে বলি। এখন আইনজীবী সেটি কমপ্লিটের কাজ করছে।
✪ ডিভোর্স দেয়ার প্রধান কোনো কারণ রয়েছে?
প্রথম এবং প্রধান কারণ হচ্ছে সে মাদকাসক্ত। ড্রাগস অ্যাডিক্টেড হয়ে গিয়েছিল। তারপরও আমি অপেক্ষায় ছিলাম, তাকে শুধরানোর চেষ্টায় ছিলাম। যখন প্রতিশ্রুতিস্বরূপ ফল পাইনি তখন ডিসাইড করি ডিভোর্সের। ওর সঙ্গে শেষবার যখন কথা হয় তখন বলি, এভাবে তো থাকা যায় না, তোমাকে শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করছি তুমি নেশা ছাড়বে কিনা? সে আমাকে বলে, ‘না, নেশা ছাড়ব নো। নেশা ছাড়লে তো আগেই ছাড়তাম।’ এ কথার পর তো তার জন্য অপেক্ষা করার কোনো প্রশ্ন থাকে না।
✪ ফ্যামিলি কোনো ইস্যু তৈরি হতো?
সেটা অবশ্যই। নোবেল যখন প্রথম দিকে নেশা নেয়, দু-একদিন ভয় পেয়ে কিছু বলা হতো না। এটা ভেবে বলা হতো না যে, ও যদি কিছু বলে। কিন্তু তৃতীয় দিন তো কিছু বলতে হয়, কেন নেশা করছে। চতুর্থ দিন প্রতিবাদী হয়ে বলতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাকে নেশা বন্ধ করার কথা বললে মারধর করতো। যখন বলতাম নেশা করা যাবে না, বন্ধ করতে হবে। তখনই মারধরের বিষয়গুলো আসতো।
✪ কখন নোবেলের মাদকাসক্তের ব্যাপার বুঝতে পারলেন?
প্রথম যখন রিলেশনে ছিলাম তখন সে মাদকাসক্ত ছিল না। যখন বিয়ে হয় তখনও মাদকাসক্ত বা নেশাদ্রব্য খুব বেশি গ্রহণ করতো না। হুট করে, কীভাবে যেন হয়ে গেল। যখন ইন্ডিয়াতে ছিলাম, সেখানে সোশ্যাল কিছু ড্রিংকস যে থাকে যেমন, কোনো পার্টিতে গেলাম, সেখানে ড্রিংকস আছে, কিছুটা খেলাম। ওখান থেকে হঠাৎ করেই অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়ে সে। যা আমরা কখনো চিন্তা করতে পারিনি। আমি এবং তার পরিবার অনেক চেষ্টা করেছি তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি যদি নিজেই না চায়, তাহলে আমরা শত চেষ্টা করে কী কোনো ফল আসবে?
✪ নোবেলের সঙ্গে প্রেম-বিয়ের সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল বলে মনে হয় এখন? কী বলবেন?
বিয়ে হচ্ছে পবিত্র বন্ধন। প্রেমে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড থাকে, ব্রেকআপ হয়। সেটা ভুল হতে পারে। কিন্তু বিয়েটা যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত জিনিস, এ কারণে কখনো বলব না বিয়েটা ভুল ছিল। বিয়েটা অবশ্যই সঠিক ছিল। কিন্তু বিয়ের পর যা হয়েছে—তার মাদকাসক্ত হওয়া, মারামারি, এসব ভুল ছিল।
✪ প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন…
নেশার কারণে আমি আমার প্রিয় মানুষকে হারিয়েছি। যদিও এটা তার দোষ। কিন্তু এখানে নেশাও একটা ফ্যাক্ট। আমি তো এটা নিয়ে কথা বলবই। কষ্ট থেকে এটা নিয়ে কথা বলতেই পারি, এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে কথা বলার পর আমার কাছে ফোন আসে। বলা হয়, তুমি তোমাদের পার্সোনাল ইস্যু নিয়ে কথা বল, ঠিক আছে। ধন্যবাদ পর্যন্ত স্ট্যাটাস ঠিক ছিল। কিন্তু এরপর কেন কথা বললা? মাদকচক্র বা বিজনেস, এসব নিয়ে কেন কথা বলতে গেলা?
➨ সালসাবিল আরও যোগ করেন… আমাকে বলা হয়, দেখো বাংলাদেশ নেশা ছাড়া অচল। এ দেশের সব পাবলিক ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা নেশা করে! ওদের ফ্যামিলি তো পাবলিকলি কিছু বলছে না। তোমার কেন এত লাগলো? তুমি জানো, কাদের বিরুদ্ধে কথা বলছো? আবার কিছু ফোনে বলা হয়, কোনোভাবে যদি কারো নাম প্রকাশ করা হয়, তোমাকে দুই মিনিটে গুম করা হবে। তোমাকে রাস্তায় শুট করা হবে। শুট করে মেরে ফেলা হবে। তুমি ভাবতেও পারছো না কিসের বিরুদ্ধে, কাদের বিরুদ্ধে কথা বলছো। কারো নাম যেন বাইরে না আসে।
✪ তাদের কাউকে আপনি চেনেন? কারা তারা?
হ্যাঁ, তাদের অনেককেই আমি চিনি। আবার অপরিচিতও আছে। তারা আসলে কারা, সেটি বলতে চাচ্ছি না আমি। নামগুলো বলা আমার জন্য ঠিক হবে না। আমি বলবও না। কিন্তু তারা আমাদের সমাজের খুবই গণ্যমান্য এবং ক্ষমতাশীল মানুষ।
✪ তাহলে নোবেলের পেছনে ক্ষমতাধররা কেউ আছে?
সেটা অবশ্যই। এসব মাদক তো বাজারে গেল আর পেল, এমন না। এসব সহজলভ্য না। এসবের মধ্যে সিন্ডিকেট, চক্র রয়েছে। যারা ওই ধরনের মাদককে সহজলভ্য করেছে। শুধু নোবেল না, তারা নোবেলের মতো হাজারও তরুণের কাছে নেশাদ্রব্যগুলো সহজে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এর পেছনে অনেকের হাত রয়েছে। তার মধ্যে খুব ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
✪ প্রাণনাশের হুমকি দিল, আইনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন?
এর আগে যখন মারামারির বিষয় আসে, নেশার জন্য নিষেধ করায় যখন নোবেল আমাকে মারধর করতো, সেই সময় জিডি করা হয়েছিল। সেটা নোবেলের নামে। ওইটা ছাড়া এখন যে ফোনে হুমকি আসছে, সেসব নিয়ে এখনো কোনো জিডি করিনি। মনে হয় না জিডি করব। কারণ, ওরা এতটাই পাওয়ারফুল মানুষ, আসলে জিডি করা আমার নিজের জন্য আরও বিপদ ডেকে আনা সমান কথা।
✪ নোবেলের পরিবার এবং আপনি তাকে ঠিক করার চেষ্টা করেননি?
তার মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক আগে ভালো ছিল। কিন্তু মাদকাসক্ত হওয়ার পর, আমি নিষেধ করতাম, ওর মা-বাবার হেল্প নিতাম ওকে ঠিক করার জন্য, চিকিৎসার জন্য তারা নিজেরাও চেষ্টা করেছে। ওর মা-বাবা যখন নিষেধ করতো তখনই মারধরের ঘটনা ঘটতো। আমাকেও মারতো। সামনে যাদের পেত, তাদেরও মারতো। তার মাকেও মারতো সে।
✪ নোবেলকে রিহ্যাবে দেয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল?
আমার সঙ্গে অনেকে নোবেলকে রিহ্যাবে দেয়ার ব্যাপারে কথা বলেছিল। ওর পরিবারের আত্মীয়-স্বজনরা কথা বলেছিল। কিন্তু রিহ্যাবে দিতে গেলে একজন অভিভাবক প্রয়োজন। অভিভাবক হিসেবে মা বা নারীদের তারা নেয় না। বাবা, কাকা বা মামা, এমন কাউকে লাগে।
✪ এখন জীবন নিয়ে পরিকল্পনা কী?
রিলেশনশিপের কথা বললে আমি আর এসবে বিশ্বাসী না এখন। এ নিয়ে কোনো প্ল্যান নেই।