ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কক্সবাজার প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৩ : কক্সবাজারের নাজিরারটেক পয়েন্টে সাগরে ভাসমান ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য বলছে, নিহত ১০ জনের মধ্যে ৫ জন ছিলেন কিশোর, যারা পেশাগতভাবে জেলে ছিলেন না।
Advertisement
এ ছাড়া এ সব কিশোর সাগরে যাওয়ার আগে তাদের পরিবারকেও জানিয়ে যায়নি। তাহলে কেন তারা সাগরে গিয়েছিলেন বা কে তাদেরকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত ৫ কিশোরের বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি এলাকায়। কারা সেই কিশোরদের সাগরে নিয়ে গিয়েছিল সেটির খোঁজে শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি এলাকায় যায় চ্যানেল 24।
নিহত কিশোর ওসমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কান্না করতে করতে বিচার চাইছেন তার মা জুহুরা বেগম আর বোন জেসমিন আকতার।
জেসমিন আকতার জানান, ওসমান ক্ষেত খামারে দিন মজুরির কাজ করতো। সাগরে মাছ ধরার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না তার। গত ৭ এপ্রিল কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল। নুরুল কবির নামে এক ব্যক্তি তার ভাইকে সাগরে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি তাদের।
Advertisement
নিহত বাকি চার কিশোর পারভেজ মোশাররফ, শওকত উল্লাহ, সাইফুল্লাহ ও সাইফুল ইসলামের বাড়িও মিঠাছড়ি এলাকায়।
স্বজনরা বলছেন, স্থানীয় মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে নুরুল কবির পরিবারের অজান্তে প্রলোভনে ফেলে গোপনে সাগরে নিয়ে গিয়েছিল কিশোরদের। মাছ ধরা না জানা স্বত্বেও ওই কিশোরদের কেন নিয়ে গিয়েছিল সেটি সন্দেহের জন্ম দিয়েছে তাদের মধ্যে। সাগরে যাওয়ার আগে নুরুল কবিরের মুঠোফোনে কারা যোগাযোগ করেছিল সেটি বের করা গেলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে বলে দাবি তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, সাগরে মাদক পরিবহনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। এ সব কিশোরদের নুরুল কবিরের মাধ্যমে ট্রলারের মালিক ও মাঝি শামসুল আলম ইয়াবা পাচারের জন্য সাগরে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি তাদের।
উদ্ধার হওয়া ১০ মরদেহের মধ্যে ট্রলারের মালিক শামসুল আলমের মরদেহও ছিল। তার বাড়ি মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নে।
Advertisement
শামসুল আলম ও নুরুল কবিরের অপরাধের বিষয়ে মহেশখালী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী জানান, নিহত শামসুল আলম ২০২০ সালে ইয়াবাসহ আটক হয়েছিলেন। এর আগে ২০১৪ সালের একটি হত্যা মামলার ৪ নাম্বার
আসামি তিনি। দেড় মাস আগে পরোয়ানা ভুক্ত থাকায় আটকও হয়েছিলেন।
এ ছাড়া ৫ কিশোরকে প্রলোভনে ফেলে সাগরে নিয়ে যাওয়া নুরুল কবিরকে ডাকাতি প্রস্তুতির সময় উপকূলীয় এলাকা থেকে অস্ত্রসহ আটক করেছিল পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতির দুটি মামলা রয়েছে।
এদিকে নুরুল কবিরের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বাবা মোহাম্মদ হোসেন ও স্ত্রী নুরুন্নাহারের সঙ্গে। তার বাবা জানান, সাগরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের কিছু জানায়নি কবির। তার ছেলে অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না দাবি করেন তিনি।
Advertisement
এদিকে স্ত্রীর দাবি, গত ৭ এপ্রিল বাসা থেকে বের হওয়ার পর কোনো যোগাযোগ হয়নি তাদের সঙ্গে। এরপর ৮ এপ্রিল সকালে ফোন করে সাগরে যাচ্ছেন জানিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন কবির।
কালারমারছড়া এলাকার বাবু মনি নামে এক জেলে গেল ১০ এপ্রিল সাগর থেকে ফিরে এলাকায় লোকজনের কাছে দাবি করেছিলেন, সাগরে নিহত শামসুল আলমের ট্রলারকে কয়েকটি ট্রলার ধাওয়া করতে দেখেছেন তিনি। ওই ট্রলারগুলোর মধ্যে একটি ছিল মহেশখালীর মাতারবাড়ির বাইট্টা কামালের। আরেকটি ছিল বাইট্টা কামালের ভাই আমান উল্লাহর। পরে তিনি শুনতে পান বাইট্টা কামালের ট্রলার ও তার ভাইয়ের ট্রলারের লোকজন শামসুল আলমের ট্রলারে থাকা লোকজনকে হাত-পা বেঁধে ট্রলারের স্টোরে ঢুকিয়ে পেরেক ঠুকে দিয়ে ট্রলারটি
ডুবিয়ে দেয়া হয়। বাবু মনি নামে ওই জেলে পুলিশ হেফাজতে থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে মাতারবাড়ির বাইট্টা কামাল ও ভাইয়ের ট্রলারের লোকজন গেল কয়েকদিন ধরে পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানান, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় বাইট্টা মাঝি ও করিম সিকদার নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।
Advertisement
এদিকে নিহত ট্রলারের মালিক শামসুল আলমের স্ত্রী রোকেয়া আক্তার বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বাইট্টা কামাল এই মামলার ১ নাম্বার আসামি এবং করিম সিকদার ৪ নাম্বার আসামি।
গেল ২৩ এপ্রিল নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে ভাসমান ট্রলার থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সোমবার রাতে পরিবারের শনাক্তের উপর ভিত্তি করে ৬টি মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।