ঢাকা: রাষ্ট্রপতি বরাবর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির দফতর হয়ে ফের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছে। শনিবার (২১ নভেম্বর) রাত ৯টা ৩২ মিনিটে আবেদন দু’টি রাষ্ট্রপতির দফতরে থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। অাইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খানসহ অন্য কর্মকর্তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন বঙ্গভবন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে।
শনিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর আইনমন্ত্রীর বাসা হয়ে আবেদন দু’টি রাষ্ট্রপতির দফতরে পৌঁছায়। এদিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল প্রস্তুত হয়ে রওয়ানা হয় মন্ত্রীর বাসার উদ্দেশ্যে। বিকেল ৪টা ৩৪ মিনিটে আবেদন দু’টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে যায়।
এর আগে, আবেদন দু’টি নিয়ে দুই কারা কর্মকর্তা দুপুর ২টা ৩৪ মিনিটে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রওয়ানা হয়ে দুপুর ২টা ৫৪ মিনিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছান। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান ও মো. আরিফুল ইসলাম প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন। দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরে যান তারা।
এর আগে, শনিবার দুপুরে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নিজেদের একাত্তরের অপরাধ স্বীকার করে লিখিতভাবে এ আবেদন করেন দেশের এ দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী। মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও এর বিচার নিয়ে হুঙ্কার ছাড়া দু’জন অপরাধীর এ স্বীকারোক্তিও দেশের ইতিহাসে আর একটি যুগান্তকারি ঘটনা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে।
রিভিউ আবেদন খারিজ ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় পড়ে শোনানোর পর কারা কর্তৃপক্ষ দু’দফা তাদের কাছে ক্ষমা চাইবেন কি-না, তা জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী, যদিও চূড়ান্ত এ ক্ষণে সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই আইনে।
সর্বশেষ শনিবার (২১ নভেম্বর) সকালে তৃতীয় দফায় তাদের ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে জানতে মুজাহিদ ও সাকার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে যান ঢাকা জেলা প্রশাসনের দুই ম্যাজিস্ট্রেট মুশফিক ও তানভির।
ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের হয়ে কথা বলতে যান সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেসার আলম ও ডেপুটি জেলার শিরিন আক্তারও।
ম্যাজিস্ট্রেটরা কারাগার থেকে বের হয়ে গেলেও তারা মিডিয়ার সামনে কোনো কথা বলেননি। তবে মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী তাদের কাছেই লিখিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বলে কারাসূত্র জানিয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে ফাঁসির আগে অপরাধ স্বীকার করে ও প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সর্বশেষ সুযোগ গ্রহণ করলেন একাত্তরের আলবদর প্রধান মুজাহিদ মুজাহিদ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম যুদ্ধাপরাধের হোতা সাকা চৌধুরী।
রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদনের বিষয়ে দ্রুত ও যেকোনো সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবেদন দু’টি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। রাষ্ট্রপতি দ্রুত এর নিষ্পত্তি করবেন বলেও আশাবাদী আইনমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও জানিয়েছেন, প্রাণভিক্ষার আবেদন নিষ্পত্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র।
প্রাণভিক্ষার এ আবেদন নাকচ সাপেক্ষে ফাঁসি কার্যকর এখন চূড়ান্ত ক্ষণে পৌঁছালো। ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে
মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের সব প্রস্তুতি অবশ্য নিয়েই রেখেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় কারাগারে শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই প্রস্তুত হয়ে আছে ফাঁসির মঞ্চ। আবুল, হজরত, মাসুদ, ইকবাল, রাজু, শাহজাহান ও মুক্তার নামের সাতজন জল্লাদকেও দুইদিন প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ যারা ফাঁসির আগে-পরে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
এর আগে শুক্রবার দুপুরেই কারাগারে চলে গেছে ফাঁসি কার্যকরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশ। ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য স্বাস্থ্যগত পরীক্ষাও (মেডিকেল চেকআপ) সম্পন্ন হয় দু’জনের।