সম্প্রতি দিল্লির জামে মসজিদ খবরের শিরোনামে। মূল ফটকে নোটিস দিয়ে বলা হয়েছে, নারীর প্রবেশ নিষেধ।
দিল্লির শতাব্দীপ্রাচীন জামে মসজিদে শুধু দেশের থেকে নয়, বিদেশ থেকেও হাজার হাজার পর্যটক আসেন। কেউ আসেন ধর্মীয় কারণে, কেউ বা এর ইতিহাস জানতে, স্থাপত্য দেখতে। সম্প্রতি সেই জামে মসজিদের প্রধান দরজায় নোটিস টাঙানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, নারীর প্রবেশ নিষেধ। প্রাথমিকভাবে সেই নোটিস বেশ মানুষের চোখে পড়েনি। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। জামে মসজিদের শাহী ইমাম বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন।
Advertisement
যে নোটিস টাঙানো হয়েছিল, তা আদৌ জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষের কি না, তা নিয়ে প্রথমে সংশয় দেখা দিয়েছিল। এবিষয়ে শাহী ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি বলেন, ”আগে মসজিদ চত্বরে নারীর প্রবেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে, মসজিদ চত্বরকে ডেটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এনিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সে কারণেই এই নোটিস টাঙানো হয়েছে। তবে ধর্মীয় কারণে কেউ মসজিদে এলে, তাকে ঢুকতে দেওয়া হবে।”
শাহী ইমামের বক্তব্যে স্পষ্ট, কোনো নারীই মসজিদে ঢুকতে পারবেন না, এমনটা নয়। তবে সকলকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বস্তুত, ইমাম নিজেই জানিয়েছেন, এই নোটিস দেওয়ার পরেও বেশ কিছু নারীকে মসজিদে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
কিন্তু এতেই বিতর্ক থামছে না। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কে কী কারণে মসজিদে আসছেন, তা ঠিক করবে কে? বস্তুত, মসজিদের যে জায়গায় নামাজ পড়া হয়, সেখানে এমনিতেই সকলকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কিন্তু তার বাইরে, চাতালে বহু মানুষ আসেন। অনেকেই আসেন ইতিহাস এবং স্থাপত্য দেখতে। বহু বিদেশি পর্যটক আসেন। তাদের ক্ষেত্রে কী করা হবে? শুধু তা-ই নয়, প্রশ্ন উঠছে, ‘ডেটিং’ বন্ধ করতে শুধুমাত্র নারীদের উপরেই কোপ পড়ছে কেন? পুরুষরা কি সে কাজ করছেন না?
Advertisement
বেশ কিছুদিন আগে মসজিদ কর্তৃপক্ষ গেটের বাইরে লিখে দিয়েছিলেন, মসজিদ চত্বরে মিউজিক ভিডিও শ্যুট করা যাবে না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। একইভাবে মসজিদ চত্বর ডেটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে না, এমন নোটিস কি দেওয়া যেত না? এসব প্রশ্ন উঠছে।
Advertisement
বস্তুত, দিল্লির নারী কমিশন একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে। সেখানে কেন এই নোটিস জারি হলো, তা নিয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। যে বৈঠকে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিবরণী চাওয়া হয়েছে। নারী কমিশনের প্রধান বলেছেন, জামে মসজিদের নোটিস নারী অধিকারের বিরোধী। এনিয়ে সবরকম লড়াই তারা করবেন। বিষয়টিকে তারা গণতন্ত্রবিরোধী বলেও দাবি করেছেন।
Advertisement
এর আগে দক্ষিণ ভারতের শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ার পরে তীব্র আন্দোলন হয়েছিল। সেখানেও নারীর অধিকারের প্রশ্ন সামনে এসেছিল। যে হিন্দুত্ববাদীরা সে সময় আন্দোলনের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল এবং মন্দিরের ঐতিহ্য রক্ষার কথা বলেছিল, জামে মসজিদের ঘটনায় তাদের কেউ কেউ নারী অধিকারের প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসছেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবিষয়ে ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছে।
জামা মসজিদে মহিলাদের একা প্রবেশ নিষিদ্ধ