ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ভোলা প্রতিনিধি,সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩ :দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করেই সংসার চালান তিনি। এক পর্যায়ে হাঁটার কষ্ট ছাড়াই ভিক্ষা করতে পরিকল্পনা করেন ঘোড়া কেনার। সেই ভাবনা থেকেই ভিক্ষার টাকা জমিয়ে কেনেন ঘোড়া। এখন ঘোড়ার পিঠে চড়ে বিভিন্ন গ্রামে ও হাট-বাজারে ভিক্ষা করেন তিনি।
বলছিলাম ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের চর গঙ্গাপুর গ্রামের জালাল ওরফে জালু মিয়ার (৫০) কথা। ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করায় স্থানীয়দের কাছে জালু মিয়া রাজকীয় ও জমিদার ভিক্ষুক নামে পরিচিতি লাভ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চর গঙ্গাপুর গ্রামের মটবাড়িতে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন জালাল ওরফে জালু মিয়া ও তার স্ত্রী শাহানুর বেগম। নিজের জায়গা-জমি না থাকায় অন্যের জমিতে কোনো রকম একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন তিনি। ঝড়-বৃষ্টির দিনে ভিজে যান তারা।
নিঃসন্তান জালু মিয়া এক সময় দিনমজুরের কাজ করলেও কাজ করার ক্ষমতা কমে গেলে জীবিকার তাগিদে স্ত্রীকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর হেঁটে ভিক্ষা করে এক সময় হাঁটার ক্ষমতাও কমে যায় তার। পরে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করার পরিকল্পনা নেন তিনি।
তাই ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে কেনেন একটি ঘোড়া। এরপর জালু মিয়া ঘোড়ার পিঠে চড়ে তাদেরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজারে ভিক্ষা করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তার স্ত্রী শাহানুর বেগম গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও বাজারে ভিক্ষা করেন।
মো. জালাল ওরফে জালু মিয়া জানান, কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় প্রায় ৭-৮ বছর আগে স্ত্রী শাহানুর বেগমকে নিয়ে তাদের ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে হেঁটে ভিক্ষা করতেন। কয়েক বছর এভাবে চলার পর একদিন জালু মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সুস্থ হলেও হেঁটে বেশি দূর যেতে পারতেন না। এ সময় তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভিক্ষা করার পরিকল্পনা করেন। পরে স্থানীয় দরুন বাজারের মো. স্বপন মৃধার কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া কেনেন। পরে সেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও হাট-বাজারে গিয়ে ভিক্ষা করেন।
তিনি আরও জানান, তারা দুজনই বয়সের কারণে সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি ভিক্ষা করতে পারেন না। এতে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহে আয় ১ থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হলেও ঘোড়ার খাবার, নিজের সংসার ও ওষুধ-চিকিৎসায় খরচ করে ঠিকমতো সংসার চলে না তাদের। যার কারণে জমি ও ঘর কিছুই করতে পরেননি। এজন্য তিনি সরকারের কাছে একটি জমিসহ ঘরের দাবি করেন।
জালু মিয়ার প্রতিবেশী নাজমা বেগম ও জরিনা বেগম জানান, জালু মিয়া ও তার স্ত্রী শাহানুর বেগম ভিক্ষা করে চলেন। তাদের নিজেদের কোনো জমি ও ঘর নেই। অন্যের কয়েক হাত জমিতে ত্রিপল ও কাঠ দিয়ে কোনো রকম ঘর তুলে অনেক বছর ধরে বসবাস করছেন। তাদের কোনো সন্তানও নেই। এজন্য তাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। বর্তমানে এই চরম গরমের মধ্যে তারা ওই ঘরে থাকেন।
স্থানীয় দরুন বাজারের ব্যবসায়ী মো. মমিন, কালাম, রিয়াজ উদ্দিন ও ওমর ফারুক জানান, শুনেছি জালু মিয়া তার একটি গরু বিক্রি করে ঘোড়া কিনে এখন ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভিক্ষা করেন। আমাদের কাছে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভিক্ষা করতে আসলে আমরা তাকে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করি।
তারা আরও জানান, এক সময় রাজা, বাদশা ও জমিদাররা ঘোড়ার পিঠে চড়ে চলাফেরা করতো। আর এখন জালু মিয়া ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভিক্ষা করায় স্থানীয়রা তাকে রাজকীয় ও জমিদার ভিক্ষুক বলে ডাকেন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক জানান, জালাল ওরফে জালু মিয়া ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন এ বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিচ্ছেন। জালু মিয়াকে আর্থিক সহযোগিতা ও জমিসহ ঘর দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।