‘চিকিৎসক-নার্স’ বেশে গুলশান-বনানীর চোর

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩ : চিকিৎসক কিংবা নার্স পরিচয়ে ঢুকতেন বাসায়। এরপর মুহূর্তের মধ্যেই মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতেন তারা। এমনই অভিনব উপায়ে চুরির অভিযোগে চোর চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ।

Advertisement

দারোয়ানকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়িতে প্রবেশ করেন আফসানা নামে এক নারী। ওই বাসার এক ফ্ল্যাটে অসুস্থ রোগী থাকায় দারোয়ানও যেতে দেন তাকে। এরপর সুযোগ বুঝে লিফট থেকে নেমে বাসার দরজা পরীক্ষা করেন তিনি। এক বাসার দরজা খোলা পেয়ে সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়েন সেখানে। মুহূর্তের মধ্যেই ল্যাপটপ মোবাইল আর মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যান।
 
চুরির শিকার ভুক্তভোগী জাহেদুল ইসলাম (পেশায় ব্যবসায়ী) জানান, মা অসুস্থ থাকায় প্রায়ই বাসায় ডাক্তার আসায় দারোয়ানও তেমন প্রশ্ন করেনি। ভোরে মেয়ে স্কুলের উদ্দেশে দরজা খোলা রেখে বেরিয়ে গেলে মুহূর্তের মধ্যেই বাসায় ঢুকে ল্যাপটপ মোবাইল চুরি করে পালিয়ে যায় ওই নারী।

Advertisement

 
পুলিশ জানায়, গুলশান-১ নম্বরের তিন নম্বর সড়কের কেএফসি গলিতে জাহেদুল ইসলামের বাসা। গত ২৫ জানুয়ারি সকালে ভবনের সাততলা থেকে স্কুলগামী মেয়েকে নামিয়ে দিতে বের হন। মেয়েকে স্কুলের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরতে সময় লেগে যায় তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিট। এরমধ্যে বাসা থেকে চুরি হয়ে যায় একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল। পুরো বাসা তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পেয়ে সিসিটিভি ফুটেজ তল্লাশি করে দেখেন, চিকিৎসক ও নার্সদের অ্যাপ্রন, মুখে মাস্ক এবং গলায় আইডি কার্ড পরা এক তরুণী বাসায় প্রবেশ করছে।
তরুণীর পরিচয় সম্পর্কে ফ্ল্যাটের দারোয়ান জানান, ওই তরুণী নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন ফিজিওথেরাপিস্ট তিনি। ভবনের সাতলায় জাহেদুল ইসলামের মা অসুস্থ। তাকে থেরাপি দেয়ার জন্য তিনি এসেছেন। এ পরিচয় দেয়ায় ফ্ল্যাটে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

Advertisement

এ ঘটনায় দেরি না করে গুলশান-১ থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। পরে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী। তার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রমে গুলশান থানা পুলিশ জানতে পারে অভিজাতপাড়ায় লোমহর্ষক চুরির ঘটনা।
পরে গুলশান থানাধীন ২ নম্বর পুলিশ চেকপোস্টের সামনে থেকে তথাকথিত চিকিৎসক নামে চোরচক্রের প্রধান আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিমকে (২২) গ্রেফতার করে পুলিশ।
ডিএমপির গুলশান বিভাগ পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসক ও নার্সদের অ্যাপ্রন, মুখে মাস্ক এবং গলায় ভুয়া আইডি কার্ড পরে অভিজাতপাড়ায় অভিনব কায়দায় চুরি করে আসছিল মিম। মূলত ভুয়া চিকিৎসকের বেশ ধরে বাসায় প্রবেশ করে চুরি করে আসছিল সে। এমন তথ্য পাওয়ার পর কথিত চিকিৎসক আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিমসহ সংঘবদ্ধ চোরচক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ। বুধবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের ধরা হয়। এসময় চুরি যাওয়া ৬টি ল্যাপটপ, ১০টি মোবাইল ফোন ও ২টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

গ্রেফতার অন্যরা হলেন: তন্ময় বিশ্বাস (৩০), স্বপন শেখ (৪৫), নুরুল ইসলাম (২৭), কলিম উদ্দিন কালু ওরফে কলিউল্লাহ (৪০) এবং মোখলেছুর রহমান (৫১)।
সংবাদ সম্মেলনে গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ বলেন, ‘আমরা একটি চুরির তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনার তথ্য পাই। চোরচক্রের প্রধান মিম খুবই ধূর্ত। তার এহেন অপকর্মের প্রধান সহযোগী তার বয়ফ্রেন্ড তন্ময়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো বাসায় চুরির আগে রেকি করে চোরচক্রের সদস্যরা। বিশেষ করে খোঁজ রাখে কোন বাসায় অসুস্থ, বৃদ্ধ বাসিন্দা আছেন। কোন বাসায় কখন মানুষ কম থাকেন, কখন কারা বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যান। তবে সকালের সময়টা চুরির জন্য টার্গেট করেন তারা। রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকা তাদের প্রধান টার্গেট। এসব এলাকায় এমনও দিন গেছে, একাধিক চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সক্রিয় সদস্য তারা। চক্রের প্রধান মিম কখনো ডাক্তার, কখনো নার্স পরিচয় দিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন। মাত্র ২/৩ মিনিটের মধ্যে ফাঁকা বাসা বা অসুস্থ বাসিন্দার উপস্থিতিতেও মোবাইল ল্যাপটপ নিয়ে সটকে পড়েন। বাসায় প্রবেশের আগে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে চক্রটি। সেসব তথ্যের সঙ্গে মিল রেখে পরিচয় দেয়। নারী ডাক্তার বা নার্স পরিচয় দেয়া, ডাক্তার বা নার্সের অ্যাপ্রন, মুখে মাস্ক এবং গলায় আইডি কার্ড পরা দেখে বাসার দারোয়ানরা সাধারণত সন্দেহ কমই করেন। এই সুযোগটাই ব্যবহার করে চুরি করে আসছে তারা, জানান তিনি।

Advertisement

তিনি বলেন, মিমসহ গ্রেফতারৃকতদের বিরুদ্ধে গুলশান থানাসহ বিভিন্ন থানায় মোট ১৪টি নিয়মিত মামলা ও ২টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। গুলশান, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও থানায় একবার করে মোট চারবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন মিম। এছাড়া মোখলেছুর রহমান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একবার গ্রেফতার হয়েছিল।
রাজধানীবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে আ. আহাদ বলেন, কোনো বাসায় ডাক্তার বা নার্স পরিচয়ে কেউ ঢুকতে চাইলে প্রবেশ করতে দেবেন না। যে কেউ আসুক না কেন, পরিচয় নিশ্চিত হয়েই প্রবেশের অনুমতি দেয়া উচিত।