র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বশেফমুবিপ্রবি প্রতিনিধি,বুধবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৩ : বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের এক ছাত্রী র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (০৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের নূরুন্নাহার বেগম হলের ২৩৪ নম্বর রুমে ঘটনাটি ঘটে। এসময় ওই ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট ঐ রুমে পড়ে  থাকে। জ্ঞান ফিরলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

Advertisement

এ ঘটনায় ওই ছাত্রী সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ফিশারিস বিভাগের বিভাগের তৃতীয় বর্ষের নূরে জান্নাত নামের এক শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের জাকিয়া সুলতানা জয়া নামের এক শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে বলেন।

পরে সে অসুস্থ থাকার পরও রোববার (০২ এপ্রিল) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে হলে প্রবেশ করে। হলে প্রবেশের পর ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এনির মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জয়াকে সিএসই বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আদরকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সে উক্ত বিষয়ে অবগত ছিল না।

Advertisement

পরদিন সোমবার জয়া (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) ও এনিকে (প্রথম বর্ষ)  নিয়ে হলে ২৩৪ নম্বর রুমে যেতে বলে এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নূরে জান্নাতের সঙ্গে দেখা করে ক্লাসে ঢুকতে বলে । পরবর্তীতে ক্লাস মিস দিয়ে প্রায় সকাল সাড়ে ৯ টায় জয়া (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) ও এনি (প্রথম বর্ষ) হলে যায়।

সেখানে যাওয়ার পর তাকে (জয়া) আবার ঐ একই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও মানসিক নির্যাতন করে নূরে জান্নাত। এ সময় তার (জয়া) জুনিয়র এনির সামনে ১০ মিনিট কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখে।

এমন নির্যাতনের এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। প্রায় ৪৫ মিনিট জ্ঞান হারিয়ে রুমে পরে থাকে। এরপর একটু একটু জ্ঞান আসলে সে নিজে থেকে অসুস্থতার বিষয়টি বলার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে আরও জানা যায়, ঘটনার সময় ঐ রুমে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী, তার রুমমেট নওশিন (তৃতীয় বর্ষ, ফিশারিজ বিভাগ) ও এনি (প্রথম বর্ষ) উপস্থিত ছিলেন। তবে এনির ক্লাস টেস্ট পরিক্ষা থাকায় কিছু সময় পর চলে যায়।

ঐ দিনই এমন নির্যাতনের কারণে সন্ধ্যার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অসুস্থা বাড়তে থাকে। এ সময় সে বারবার বমি ও শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে আসায় তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি কর হয়। সে এখনো (০৪ এপ্রিল) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় রয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নূরে জান্নাতের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আমি এ বিষয়ে জানি না। অযথা একটা বিষয় নিয়ে শুধু শুধু আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা নিয়ে যদি বাড়াবাড়ি করা হয় তাহলে আমি অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

Advertisement

সিএসই বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আদরের নাম অভিযোগ পত্রে থাকায় তার কাছে এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, যা বলার আমি প্রক্টর (ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান) স্যারের কাছে বলেছি। এ বিষয়ে আমি আর এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না।

ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী এনি জানায়, আমি নূরে জান্নাত আপু বা অন্য কারো কাছে কোনো বিষয়ে বিচার দেইনি। সে দিনই হলে গিয়ে তাকে (নূরে জান্নাত) আমি প্রথম দেখি। এর আগে তাকে আমি চিনতামও না। হলে আমাকে এবং জয়া (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) আপুকে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এক পর্যায়ে জয়া আপু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমার পরীক্ষা থাকায় কিছুক্ষণ পর হল থেকে আমি চলে আসি।

Advertisement

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর জয়া বলেন, আমাকে হলে যে বিষয়ের জন্য ডাকা হয়েছে আমি সে বিষয়ে সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কেন আমাকে হলে নিয়ে এরকম মানসিক নির্যাতন করা হলো তা আমি জানি না। আমি অসুস্থ থাকার পরও বেশ কয়েকবার আমাকে হলে ডাকা হয় এবং সেখানে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয় এবং এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি সেখানে। এ বিষয়ে আমি প্রক্টর বরাবর  লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি  চাই এবং বঙ্গমাতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা আর দ্বিতীয়বার যেন না ঘটে এটাই আমার প্রশাসনের কাছে চাওয়া ।

Advertisement

এ বিষয়ে নুরুন্নাহার বেগম হলের প্রভোস্ট ড. ফরহাদ আলী এ বিস্ময় সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে ফোনে এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।