রমজানে বিএনপির কর্মসূচি, রোজাদারদের ভোগান্তি (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩ : রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র রমজান। এ মাসে আল্লাহ সব হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি বাদ দিয়ে ইবাদতে মশগুল হতে বান্দাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদতের মাধ্যমে নিজেদের আত্মশুদ্ধির চেষ্টা চালান এ মাসে। তবে অভিযোগ উঠেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই মাসে আন্দোলনের নামে জনগণের ভোগান্তি বাড়াতে কাজ করছে রাজনৈতিক দল বিএনপি।

Advertiseme

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাবি আদায়ে রমজান মাসেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতারা। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে পবিত্র রমজান মাসকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে বেছে নিয়েছে দলটি।

Advertisement

একদিকে দল গোছানো, অন্য দিকে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে থাকার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি যোগ হয়েছে ইফতার পার্টি ঘিরে কর্মসূচি। বিশেষ করে আন্দোলনে ঢাকা মহানগরের সক্ষমতা প্রমাণে দেয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব।
আন্দোলনের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, ‘রমজান মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার কথা নয়। তবে দেশের যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।’
Advertisement

রমজানে বিএনপির যত কর্মসূচি
কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদসহ পূর্বঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১ এপ্রিল সারা দেশের সব মহানগর ও জেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ কর্মসূচি।
এছাড়া ৮ এপ্রিল সারা দেশের সব মহানগরের থানা ও উপজেলা পর্যায়ে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পালিত হবে অবস্থান কর্মসূচি।
এ ছাড়া ১০ থেকে ১৩ এপ্রিল এবং ১৬ এপ্রিল বিভাগীয় পর্যায়ে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারা দেশের সব ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি অথবা মানববন্ধন বা অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাশাপাশি দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে ২৮ মার্চ থেকে দেশের প্রতিটি মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, দুস্থ, অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তাসহ বিভিন্ন গণসংযোগমূলক কর্মসূচিতে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়, যা ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
মূল দলের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী যুবদলও তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপির অঙ্গসংগঠনটি রমজান উপলক্ষে বিভাগীয় শহরে নেতাকর্মীদেরকে সক্রিয় রাখার লক্ষ্যে ৩১ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগীয় পর্যায়ে ইফতার মাহফিলের তারিখ নির্ধারণ করেছে।
Advertisement

চলছে ড্রেস রিহার্সেল
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নির্বাচনে না এসে বিএনপি আন্দোলনে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ের যে মহড়া দিচ্ছে- তাতে ফল ভালো হবে না। জনগণকে সাত-পাঁচ বুঝিয়ে বিএনপি যে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে, তা ব্যর্থ হবে। ইতোমধ্যে এই ধরনের বহু আন্দোলনের প্রয়াসে বিএনপির ব্যর্থতার পরিচয় মিলেছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, বিগত আন্দোলনে ঢাকা মহানগরের রাজপথে কাঙ্ক্ষিত সক্ষমতা দেখাতে পারেননি নেতাকর্মীরা। সারাদেশের মতো ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলন হলে সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হতো। এসব ঘটনায় ঢাকায় বিএনপির নেতৃত্বে কিছুটা রদবদল হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন নেতারা প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পুনর্গঠন করেন। কিন্তু তারপরও থানা এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সমন্বয়হীনতা দূর করে সবার মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে।
নেতাকর্মীরা জানান, মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন কর্মসূচি জমলেও ঢাকায় তেমন সাড়া মেলে না। এর জন্য রমজানকে সামনে রেখে এক ধরনের ড্রেস রিহার্সাল চালানো হচ্ছে। রমজানের পর কঠোর আন্দোলনের চেষ্টা রয়েছে দলটির।
এ ছাড়া নির্বাচন ও আন্দোলনের বছর হওয়ায় ঘরোয়া রাজনীতির অংশ হিসেবে দলটি এবার ইফতারকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রথম রমজানে লেডিস ক্লাবে এতিম ও আলেম-ওলামাদের নিয়ে এবং চতুর্থ রমজানে পেশাজীবীদের সঙ্গে ইফতার করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। এরপর ৭ রমজান কূটনীতিক ও ১১ রমজান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করবে বিএনপি। এসব ইফতারে আমন্ত্রিতদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
Advertisement

মাঠের কর্মসূচি বাড়াবে ভোগান্তি
রমজানে বিকেলে অফিস ছুটির পর সবারই ইফতারের আগে ঘরে ফেরার তাগিদ থাকে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বেচাবিক্রি ঘিরে সড়কে থাকে বাড়তি চাপ। এসবের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি কেবল মানুষের ভোগান্তিই বাড়াবে।

এদিকে পর্যালোচনা করে দেখা যায় রমজানে বিএনপির বেশিরভাগ কর্মসূচিই বিকেল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে দেয়া হয়েছে।। অর্থাৎ, ইফতারের আগ মুহূর্তে আয়োজিত এসব কর্মসূচি হবে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের কারণ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- বিএনপির এমন কর্মসূচি রোজাদারদের ‘জিম্মি করার’ শামিল।

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, জনগণকে জিম্মি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার চেষ্টা তাদের (বিএনপি) পুরনো অভ্যাস। তারা দেশের মানুষের মধ্যে ভুল বুঝিয়ে, বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। মানুষ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু না।
‘বিএনপি দলগতভাবে জনগণকে বাইরে রেখে কাজ করে। তারা জনগণের কোনো দাবি আদায় করেনি। তারা জানে, দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতায় আনবে না, তাই বিদেশিদের কাছে হাত পাতছে। ফলে জনগণের সুখ-দুঃখ তাদের নেতাদের দেখার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না,’ যোগ করেন সুভাষ সিংহ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করেছেন।
নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পবিত্র রমজানে অতীতে আন্দোলন হয়নি। কিন্তু বিএনপির কর্মসূচি দেখে মনে হচ্ছে, তারা রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। রমজানেও বিএনপি মানুষকে স্বস্তি দিতে চায় না, ভোগান্তি সৃষ্টির জন্যই তারা রমজানে কর্মসূচি দিয়েছে।’

বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও। তিনি বলেন, ‘অন্তত এই রমজান মাসে জনগণকে আন্দোলন থেকে নিস্তার দেন।’

সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, রমজান মাসে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে খালেদা জিয়া ১৭ শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মতে ‘যারা রমজান মাসে মানুষকে গুলি করে হত্যা করে, তারা রমজান মাসের প্রতি সম্মান দেখাবে কী করে? তাইতো তারা এই মাসে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। মানুষের দুর্ভোগের প্রতি তাদের কোনো অনুভূতিই নেই।’

এদিকে নানা সংকট ও সমস্যায় থাকা জনগণের জন্য রমজানের বিকেলে বিএনপির দেয়া কর্মসূচি ভোগান্তি বাড়াবে ছাড়া কমাবে না বলেই ধারণা সাধারণ মানুষের।