ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩ : বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যজন ও অভিনেতা মামুনুর রশীদের একটি মন্তব্য নিয়ে কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তার ভাষ্যমতে, ‘এখন রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। এর মধ্য দিয়েই হিরো আলমের উত্থান হয়েছে।’
Advertisement
নাট্যজন মামুনুর রশীদের এই বক্তব্যে নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের বেশির ভাগ মানুষই সহমত পোষণ করেছেন। তবে কেউ কেউ আবার এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মামুনুর রশীদকে নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনাও করেছেন। এবার সেসব কটূক্তিকারীদের এক হাত নিলেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি।
Advertisement
নাট্যজন মামুনুর রশীদের বক্তব্যের ইস্যুতে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন শাহনাজ খুশি। তার স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
Advertisement
‘একটা উপজেলা শহর থেকে যখন ঢাকায় এসেছি, ঢাকার নানান অঙ্গনের মানুষকে দেখেছি। তারা কোনো-না কোনোভাবে আমার চেয়ে সমৃদ্ধ! একটা চায়ের কাপ ধরা, একটা সভাস্থলে নীরবতায় বসা, একটা কথা শুরু করার ম্যানারস- সব শিখতে হয়! এগুলো পাঠ্য বইয়ের মতোই অতীব গুরুত্বপূর্ণ!
থিয়েটারে যুক্ত হয়েছি, দেখেছি এ এক শিক্ষার সাগর। সেখানে শুধু নাটক শেখানো নয়, দেশ তথা দেশের বাইরের প্রখ্যাত গুণিজনের জীবনবৃত্তান্ত, সংগ্রাম, জীবনের সৌন্দর্য্য নিয়ে চলেছে বিস্তর আলাপ! দিনরাতের কোন হিসাব থাকে নাই। প্রতি মূহুর্তে গ্রহণ করেছি সে বিদ্যালয় থেকে। এসব কিছু জানতাম না কেন, সে লজ্জায় নত থেকেছি। জানতে পারার গৌরবে বিনয়ী হয়েছি! জীবনের পরিমিতিবোধ শিখেছি, যে পরিমিতিবোধ সকল চরিত্র রুপায়নে বড় বোধের জোগান দিয়েছে। বিনীত করেছে সৃষ্টির পায়ে! যা আমি জানি না, তা শেখার জন্য জানা মানুষের অপেক্ষা করেছি প্রেমের মত করে।
Advertisement
এখন কিছু জানার দরকার হয় না মামুন ভাই! কিছু না জানা মানুষগুলো, জানা মানুষকে হিংসাত্মক প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলছে। সে প্রতিপক্ষের জিঘাংসা কত নোংরা হতে পারে, তা আজ দুইদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে! যা বাকরুদ্ধ করে দেয়!
মামুন ভাই, আপনার হাতে তৈরি এ সংস্কৃতি অঙ্গন আলোকিত করা কত শিল্পী! কত না জানার জন্য, ভুলের জন্য আপনি সবাইকে বকেছেন বা রাগ করেছেন! সে জন্য কেউ হয়ত থিয়েটারে আসেনি, অভিমান করেছে। দল ভেঙে নতুন দলও তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই কুৎসিত এবং উদ্ধত্যপূর্ণ বিমাতাসুলভ কথা কি কখনও শুনেছেন?
হলভর্তি মানুষের মুহু মুহু করতালি পেয়েছেন, শহীদ মিনারের পাদদেশে অসীম নিবরতায় আপনার বক্তব্য শুনেছে মানুষ। সকল অসামঞ্জস্য নিয়ে সরকারের প্রতিও কত তীক্ষ্ণ বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কখনও কি এমন অসভ্য মন্তব্য শুনেছেন? শুধু রুচির নয়, বিবেকের বিকলাঙ্গতা কতটা, তা কি আর বলার দরকার আছে?
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের তুখোঁড় আপনাকে টিকটকের ভাঁড় জনকদের তুলনায় দাঁড় করিয়েছে যারা, তারাও তারই অনুসারী! শিল্প দিয়ে শিল্পীর প্রতিযোগীতা করা যায়। যাদের সে সঞ্চয় নাই, তারাই নীচতায় হরিলুট শুরু করে। সুন্দর কিছু শুরুর আগে কুৎসিত কিছু কালক্ষেপণ হয়, এটা নিশ্চয় তেমন সময়। বাংলাদেশের এত সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ধারক/বাহক অথবা উদাহরণ নিশ্চয় এরা হতে পারে না!
যারা অতি কথ্য দিয়ে আপনাকে হেয় করতে চেয়েছে, সেটা তাদের দীনতা এবং ব্যর্থতার আক্রোশ! শিল্পী এবং শিল্পকে মোকাবেলা করতে শৈল্পিক/কথা/যুক্তি/আচরনই লাগবে, এটা তারা জানে না। তাদের এ দীনতাকে ক্ষমা করবেন আপনি।
ভাগ্যিস আপনি কোন সরকারি মন্ত্রণালয়ে/টিভি চ্যানেলে/কোন সরকারের আনুক্যলের প্রতিষ্ঠানে নাই এবং কোনদিন ছিলেনও না। যদি সেটা থাকতেন, তাহলে কি বলতো এই মন্তব্যকারীরা?
Advertisement
প্রায় আশির কাছাকাছি একজন নাট্যপ্রাণ মানুষ, যে তার একটা জনম বিলিয়ে দিয়েছে নাটক/শিল্পের জন্য। বিনিময়ে উল্লেখ করবার মত কিছুই নেয়নি কখনও! এখনও এই বয়সে তাকে সংসারের জন্য অভিনয় করতে হয়, লিখতে হয়। এই শিল্প থেকে কিছুই সঞ্চয় করেনি বলেই তার অসুস্থতায় আমরা তার শিল্প সন্তানরা তার হাত ধরে তার পাশে দাঁড়িয়ে যাই। তার তুলনা এবং মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এ কোন অশৈল্পিক দুর্বৃত্ত অন্ধকার! আমাদের কবে, কোন মোহে এত বিবেক এবং রুচির বিকালঙ্গতা হল? আপনার সন্তানদের আপনি বরাবরের মত, নিজ গুণে ক্ষমা করবেন মামুন ভাই!’