প্রস্তুত থাকুন, আপনাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানো হবে : চঞ্চল চৌধুরী (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি,বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩ : বর্তমান সময়টা ভার্চুয়াল, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে নেটিজেনদের সিংহভাগ সোশ্যাল মিডিয়ায় সস্তা বিনোদনে মত্ত। এমন সস্তা বিনোদনপ্রিয়তা একটি জাতিকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে, সেটি একটি শঙ্কা বটে! সম্প্রতি সময়ে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সোচ্চার হয়েছেন। এবার সমসাময়িক এই প্রসঙ্গে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন গুণী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

Advertisement

মাধ্যমটা সামাজিক নাকি অসামাজিক? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঘাড়ে চেপে যখন অবাধে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকে, তখন আমরা অধিকাংশ মানুষই শুধু নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি। এটি এখন আমাদের ব্রেইনের ওপর বিষফোঁড়াসম সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমরা বাক স্বাধীনতার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ স্বেচ্ছাচারীর মত যা খুশি করছে, যা ইচ্ছে বলছে।

Advertisement

প্রশ্নটা এখানেই…আধুনিকতা আর সম অধিকারের ঝান্ডা তুলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অপব্যবহার করছেন না? আপনার অরক্ষিত এই কার্যকলাপে সমাজ বা নতুন প্রজন্ম কতটুকু প্রভাবিত হচ্ছে, সেটুকু ভাবার অবকাশ কি আপনার আছে? আপনি কি সত্যিই সমাজের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করছেন?

Advertisement

ছোটবেলায় পড়তাম বিজ্ঞান ‘আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?’ বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহারই হয়তো জাতির জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো রাখেও। কঠিন সত্য এটাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে যতটা না সামাজিক কর্মক্ষেত্র, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ব্যক্তিগত বাণিজ্য ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ফেসবুকে ‘রিল’ নামক একটি বিষয় আছে। এখানে অধিকাংশই যে কতটা অশ্লীল, ভাবতেও অবাক লাগে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব অশ্লীলতার বিরুদ্ধচারণ করি। সেন্সরবিহীন এ সকল অশ্লীল কার্যকলাপ কে বন্ধ করবে? এখানে রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা কি আমরা আশা করতে পারি না?

Advertisement

আপনার বা আমার অসচেতনতা অথবা সমর্থনের ভেতর দিয়ে তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে বিতর্কিত কিছু ভাইরাল ব্যক্তি। সে যখন আপনার কাছে পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব দাবি করবে, আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন? পারবেন না। কারণ আপনার বালখিল্য আচরণ, উদাসীনতা আর সস্তা বিনোদন প্রিয়তায় আপনি সেই সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আপনার অরক্ষিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারই এর জন্য দায়ী।

আপনি কি আপনার সন্তানের কথা ভাবেন? ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেন? যদি করেন, তাহলে অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আপনাকেও অনেক দায়িত্বশীল হতে হবে।

তথাকথিত কিছু অসৎ রাজনীতিবিদদের কারণে যেমন রাজনীতি কলুষিত, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার বা আমার সমর্থনে গজিয়ে ওঠা ভাইরাল ব্যক্তিদের কারণে সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। এর জন্য অন্য কেও দায়ী নয়। দায়ী আপনি বা আমি, দায়ী আমাদের নিম্ন মানসিকতা। আপনি কাকে অনুসরণ করবেন বা সমর্থন দেবেন বা কে হবে এই দেশে আপনার রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আদর্শ, চূড়ান্ত ভাবনার এই সময়টুকুও বোধ করি পেরিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো অবজ্ঞা করার মত হলেও, আমাদের সন্তানেরা ভবিষ্যতে অনুসরণ বা শ্রদ্ধা করার মত কাউকে পাবে না। পরিচিত হতে হবে আপনার রুচিতে জন্ম দেওয়া কোন ভাইরাল বিনোদন ব্যক্তির উত্তরসুরী হিসেবে। কারণ আপনি বা আমি ঠিক-বেঠিক বা উচিত-অনুচিতের পার্থক্য ভুলে সস্তা বিনোদন প্রিয় জাতিতে পরিণত হয়ে গেছি। বুঝতে পারছেন কি, সামনে কতটা অন্ধকার?

চুপ করে থাকা রাজনীতিক, সংস্কৃতিবান এবং রুচিশীলদেরকে বলছি, প্রস্তুত থাকুন। আপনাকে যে কোনো উপায়ে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানো হবে। তাই এখনও সময় আছে মুখ খুলুন, প্রতিবাদ করুন।

এই ব্যর্থতা প্রথমত- রাষ্ট্রের, দ্বিতীয়ত- তথাকথিত সংস্কৃতি কর্মীদের; যাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল জাতিকে সঠিক পথ দেখানো, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া।