ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজশাহী প্রতিনিধি,শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩ : প্রায় পৌনে ৩০০ বছর আগে রাজশাহীতে ব্যবসা করতে এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীরা। নিজেদের ধর্মচর্চার জন্য শহরজুড়ে তারা নির্মাণ করেছিলেন বেশকিছু মঠ। এই মঠের চারপাশের অনেক জায়গা এখন বেদখল। মঠের জায়গায় গড়ে উঠেছে বাড়িঘর-দালান কোঠা। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একজন প্রকৌশলীও মঠের জায়গা দখল করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
Advertisement
রাজশাহী মহানগরীর সপুরা এলাকায় থাকা একটি মঠের চারপাশ দখল করে রেখেছেন পাউবো’র রাজশাহীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল ইসলাম। কয়েকদিন আগেই সেখানে তিনি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ কয়েকদফা গিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলেছেন। তারপরও কাজ বন্ধ হয়নি। দ্রুত নির্মাণ এগিয়ে নিতে রাতেও সেখানে কাজ চলছে।
Advertisement
হেরিটেজ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী জানান, ১৭৪৫ সালের পরে মুর্শিদাবাদ থেকে রাজশাহী এসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরাই বিরাট বিরাট পুকুরসহ জায়গা কিনে পুকুরপাড়ে মঠগুলো নির্মাণ করেছিলেন। এসব মঠে ব্যবসায়ীরা ধর্মচর্চা করতেন। পরবর্তীতে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর মঠগুলো সংরক্ষিত ঘোষণা করে। সবশেষ ২০১৮ সালের দিকে ভারতীয় সরকারের অর্থায়নে মঠগুলোর সংস্কার কাজ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
Advertisement
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সপুরা এলাকার মঠটি ঠিকমতো সংস্কারও করতে দেননি প্রকৌশলী নাজিমুল ইসলাম ও তাঁর ভাই কলেজশিক্ষক ইয়াসিন আলী। মঠের গম্বুজের পাশে বারান্দার একটুও কাজ করতে দেননি তারা। ঠিকাদার শুধু সিঁড়ি এবং গম্বুজটারই সংস্কার করতে পেরেছিলেন। এখন মঠের চারপাশ দখলে নিয়ে ভবন তুলছেন প্রকৌশলী নাজিমুল।
Advertisement
শুক্রবার (২৪ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মঠের চারপাশ টিন দিয়ে ঘিরে ভেতরে কাজ চলছে। মঠের গম্বুজের গা ঘেঁষে ভিত কাটা হয়েছে।
সেখানে কাজ করা শ্রমিকেরা জানান, এখানে ছয়তলা ভবন উঠবে। গম্বুজ ঘেঁষে ভিত খোড়ার কারণে মঠটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নাজিমুল ইসলামের জমি সপুরা মৌজার ৪৪৮০ নম্বর দাগে। মঠও আছে একই দাগে। তবে নকশায় মঠের জায়গা চিহ্নিত করা আছে। এখন একই দাগে জায়গা বলে মঠের জায়গাটুকুও দখল করছেন প্রকৌশলী নাজিমুল।
এদিকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাজিমুল। তিনি বলেন, ‘আমি মঠের কোনো জায়গা দখল করছি না। নিজের জায়গায় ভবন তুলছি।’
জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহীর সহকারী কাস্টোডিয়ান শাওলি তালুকদার বলেন, ‘মঠের জায়গা দখল করে কোথায় কাজ চলছে সেটি না জানলে ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। এলাকার যে কেউ অভিযোগ করলে আমরা গিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’
Advertisement
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি তপন সেন আমাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন যে, মঠের জায়গা দখল করে ভবন তোলা হচ্ছে। এরপর কয়েকদফা পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলেছি। আর তপন সেনকে পরামর্শ দিয়েছি, তারা যেন আদালতে একটা মামলা করেন। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পুলিশের না। তাঁরা আদালতে মামলা করলে পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে।’