সম্পত্তির লোভে স্বামীকে খুন

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩ : দাম্পত্য কলহ ও সম্পত্তির লোভে স্বামী মো. এমদাদুল হককে (৪৮) হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী নারগিস মোস্তারী (৪০)। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২১ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টায় সেমাইয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মেশিয়ে খাইয়ে মো. এমদাদুল হককে অচেতন করেন তিনি। পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ৫০ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে স্থানীয় আইয়ুব আলীর সহায়তায় স্বামীর হাতে জিআই তার প্যাঁচিয়ে কারেন্টের তার দিয়ে বৈদ্যুতিক শর্ট দিয়ে এমদাদুল হকের মৃত্যু নিশ্চিত করেন স্ত্রী নারগিস মোস্তারী।

Advertisement

হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন নারগিস মোস্তারী ও মো. আইয়ুব আলী।

এর আগে ২২ মার্চ রাতে এমদাদুল হককে হত্যার ঘটনায় নারগিস মোস্তারী ও মো. আইয়ুব আলীকে আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৩) দায়ের করেন তার ছোট ভাই কামাল পাশা।

Advertisement

নারগিস মোস্তারী উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর গ্রামের ফরাজী বাড়ির মৃত এমদাদুল হকের স্ত্রী ও উপজেলার ১৬নং সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরের বাজার গ্রামের আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে।

মো. আইয়ুব নবী প্রকাশ আইয়ুব আলী প্রকাশ আলী (২২) নোয়াখালী জেলার চরজব্বর থানার চরভাটা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি বর্তমানে মিরসরাইয়ের সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরের বাজার গ্রামের আলী চৌধুরী বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

Advertisement

জবানবন্দিতে নারগিস মোস্তারি বলেন, বিগত ১ বছর পূর্বে আবুদাবি থেকে দেশে আসেন স্বামী এমদাদুল হক। পারিবারিক জীবনে তাদের নাহিয়ান (১৯) ও নামিয়ান (৮) নামে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামীর সাথে তার প্রায় সময় ঝগড়া হতো। দাম্পত্য কলহ এবং সম্পত্তির লোভে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। হত্যাকাণ্ডে সহায়তার জন্য ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মো. আইয়ুব নবীকেও সাথে নেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২১ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টায় সেমাইয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মেশিয়ে খাইয়ে মো. এমদাদুল হককে অচেতন করেন তিনি। পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আইয়ুব আলীর সহায়তায় স্বামীর হাতে জিআই তার প্যাঁচিয়ে কারেন্টের তার দিয়ে বৈদ্যুতিক শর্ট দিয়ে এমদাদুল হকের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। রাত ১০ টায় আইয়ুব আলী নিজ বাড়িতে সাহেরখালী চলে যান। পরবর্তীতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় নারগিস মোস্তারী তার দেবর কামাল পাশাকে ফোন দিয়ে বলেন তার ভাই বৈদ্যুতিক শর্ট খেয়েছেন।

Advertisement

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরসরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এমদাদুল হকের মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে তার লাশ। তার বাম হাতের পোড়ার চিহ্ন এবং নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। পিঠেও কালচে দাগ ছিলো। স্ত্রীর কথায় সন্দেহ হওয়ায় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করি। পরবর্তীতে তিনি স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। হত্যাকাণ্ডে আইয়ুব আলী নামে আরো একজন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তার দেয়া ঠিকানা মতে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ভোরে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরবাজার এলাকা থেকে আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইয়ুব আলী পেশায় দিনমজুর। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন নারগিস মোস্তারী। কথামত স্বামী এমদাদুল হককে হত্যার পর নগদ ৫০০ টাকা আইয়ুব আলীকে দেন নারগিস মোস্তারী। স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তি বিক্রি করে বাকি টাকা পরিশোধ করার কথা ছিলো। আইয়ুব আলীর সাথে বাবার বাড়িতে ঘরের কাজ করানোর সময় পরিচয় হয় তার (নারগিস মোস্তারি)। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিআই তার, মাল্টিপ্ল্যাগ, প্লাস ও আইয়ুব আলীর কাছে থাকা ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া নারগিস মোস্তারি ও আইয়ুব আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার বাদী কামাল পাশা বলেন, সম্পত্তির লোভে আমার ভাইকে হত্যা করেছেন ভাবী। অচেতন করে আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়া এক বছর আগে আবুদাবি (ইউএই) থেকে বাড়িতে আসেন। ভাবি সব সময় বাবার বাড়িতে থাকতে চাইতো এবং উনার বাবার বাড়ি এলাকায় ভাইয়াকে বাড়ি করতে বলতো। ভাইয়া রাজি না থাকায় প্রায় সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। সেজন্য ভাইয়াকে এভাবে মেরে ফেলবে কখনো চিন্তাও করতে পারিনি। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

Advertisement

 

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন, দাম্পত্য কলহ ও সম্পত্তির লোভে স্বামী এমদাদুল হককে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী নারগিস মোস্তারী। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন আইয়ুব আলী নামে আরেকজন। তারা দু’জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিজ্ঞ আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।