ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩ : তিনি সরকারি কর্মচারি। কাজ করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকে। ঢাকায় আছে তার কোটি কোটি টাকা মূল্যের অন্তত ২৭টি ফ্ল্যাট। দেহরক্ষীও আছে তার। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ১৫ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। কর্মক্ষেত্রে সবাই তাকে চেনেন সল্টু বাবু হিসেবে।
Advertisement
মিরপুরের মধ্যপীরেরবাগসহ রাজধানীর বিভিন্নস্থানে এমন ভবনের সংখ্যা ৬টি। এর মধ্যে একটি ভবনেই তার ফ্ল্যাট আছে ২৭টি। ঢাকায় যার এতো এতো ফ্ল্যাট, তিনি নিশ্চয় অনেক বড় ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি। আসল বাস্তবতা, তা নয়। স্ত্রীকে ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়ে, নেপথ্য থেকে এসব ভবন নির্মাণে জড়িত থাকছেন তিনি।
Advertisement
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকে তার পদবী রেখাকার। নাম তার শফিউল্লাহ বাবু। মধ্যপীরেরবাগের শিমুলতলার অপ্সরা সায়েম হোমস। এটি নির্মাণে রাজউক থেকে ৮তলার অনুমোদন মেলে। অভিযোগ ওঠেছে, ৪ জন কর্মকর্তার সই জালিয়াতি করে ভবনটি ৯তলা করতে ভুয়া কাগজপত্র বানানো হয়। জাল-জালিয়াতির নকশায় ১৬টি ফ্ল্যাটের অর্ধেক বিক্রিও করে দেয় ডেভেলপার কোম্পানি। হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। এ ভবন নিয়ে নকশা জালিয়াতির বিষয়টি জানানোর পর অনুসন্ধান টিমের ওপর ক্ষেপে যান জমির মালিক তমিজউদ্দিন।
Advertisement
২০০১ সালে রাজউকে কার্য-সহকারি পদে মাস্টাররোলে যোগ দেন শফিউল্লাহ বাবু। তবে সল্টু বাবু নামেই তাকে চেনে সবাই। ছল চাতুরি, জাল জালিয়াতির কারণেই তার নামের সঙ্গে এ উপাধি। দেহরক্ষীও আছে তার। তার ডেভেলপার কোম্পানীর বিষয়টি জানেন পরিবারের সদস্যরাও। তারা জানান : যে ফ্ল্যাটে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন, সেই ১০তলা পুরো ভবনটিই শফিউল্লাহ বাবুর। কিভাবে তিনি এই ভবনের মালিক হলেন, সে ব্যাপারেও তথ্য দেন তারা।
ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অপ্সরা হোমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন শফিউল্লাহ বাবুর স্ত্রী কুলসুমী আক্তার লিজা। অথচ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই চেনেন না কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। এবার রাজউক কর্মচারি শফিউল্লাহ বাবুর খোঁজে অনুসন্ধান। অফিস টাইমে তার কর্মস্থলে গিয়ে দেখা যায় সেখানে চেয়ার-টেবিল খালি পড়ে আছে। সহকর্মীরা জানান : বেশিরভাগ সময় এমনই ফাঁকা থাকে। নিয়মিত হাজিরা দিয়ে তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে যান।
তবে, রাজউকে চাকরি না করলেও শফিউল্লাহ বাবুর শ্যালক কাওছারকে ভগ্নিপতির কর্মস্থলে হরহামেশাই কাজ করতে দেখা যেতো। অনুসন্ধান টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন তিনি। ভগ্নিপতির জায়গায় শ্যালক। তাও কি সম্ভব? বাবুর কর্মস্থলের থাকা লকারের তালাখুলে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ঘাঁটাঘাটিঁ করতে দেখা যায় একজনকে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে যান তিনি।
Advertisement
সম্প্রতি রাজউকের সার্ভার থেকে ৩০ হাজার নথি গায়েব হয়ে যায়। সেই নথি গায়েবের রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি। অভিযোগের তীর-বাবু ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জাহিদুল ইসলাম সবুজসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে। কাদের সুবিধা দিতে নথি গায়েব হলো তা নিয়ে তদন্ত কমিটি করেছে রাজউক।
২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে ১৬ বার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে ৮ বার, মালয়েশিয়ায় ৪ বার, সিঙ্গাপুরে ২ বার যান তিনি। এছাড়া ১ বার করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেপাল ভ্রমণ করেন। অনুসন্ধানে তার দুটি পাসপোর্ট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজউক কর্মচারি বহুমুখী সমবায় সমিতি অফিসে উপস্থিত অনুসন্ধান টিম। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন শফিউল্লাহ বাবু ওরফে সল্টু বাবু। যার বিরুদ্ধে রাজউক কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও ভবনের নকশা জালিয়াতির অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে তার মুখোমুখি এটিএন নিউজ। ক্যামেরা দেখে এভাবেই সটকে পড়েন তিনি।
কেবল কর্মকর্তা-কর্মচারিই নয়, নানা অনিয়মে খোদ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের কর্মকাণ্ডই প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা- টিআইবি।