নির্যাতনের একমাস পর ক্লাসে ফিরে যা বললেন ফুলপরী (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি , সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩ : এক মাস আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। এরপর থেকে আর কোন ক্লাসে অংশ নিতে পারেননি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ওই শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন পর সোমবার (১৩ মার্চ) থেকে নতুন করে ক্লাস শুরু করেছেন তিনি।

Advertisement

সকালে সহপাঠীদের সঙ্গে তিনি ফিন্যান্স বিভাগের ক্লাসে অংশ নেন। এর আগে গতকাল রোববার (১২ মার্চ) বাবার সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসেন ফুলপরী। পরে প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র নিয়ে তার পছন্দমতো বরাদ্দকৃত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠেন।

Advertisement

দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ফুলপরী। তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আজকে প্রথম ক্লাসে এসেছি। ক্লাসে ফিরতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমার বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতা পেয়েছি। আমি এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস করবো। আগে নিরাপত্তাজনিত কারণে দুশ্চিন্তায় ছিলাম, সে ভয় এখন নেই। আমাকে হলেও সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমি সেখানে ভালো আছি। সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে চাই।
Advertisement

তার সহপাঠীরা বলেন, ‘ফুলপরীকে ক্লাসে পেয়ে আমরা আনন্দিত। সে সবার সঙ্গে ভালোভাবে মিশে গেছে। আমরা তার যেকোনো সহযোগিতায় পাশে থাকবো। আর প্রত্যাশা থাকবে তার সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি যেন অন্য কারও সঙ্গে না হয়। আমরা মনে করি তার মতো সকল মেয়েদের সাহসী হওয়া উচিত।’

Advertisement

এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে প্রায় এক মাস শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি নির্যাতনের শিকার ফুলপরী। তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিতে এবং হল পছন্দ করতে কয়েক দফা ক্যাম্পাসে এলেও ক্লাসে ফেরা হয়নি তার। এই সময়ে তার সহপাঠীরা নিয়মিত ক্লাস করলেও ভুক্তভোগীকে বাড়ি থেকে ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়াতে হয় নির্যাতনের বিচার পেতে। ফলে অন্যদের থেকে অ্যাকাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, ‘আজকে ফুলপরী ক্লাসে এসেছেন। এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস করবে। আমরা ওর খোঁজ-খবর রাখছি। অ্যাকাডেমিক কমিটির মিটিংয়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। ওই ছাত্রী ক্লাসে এলে যেন কোন ধরণের নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় না পড়ে এবং কোন ধরণের বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় এ নিয়ে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া, গত মাসে ক্লাসে অংশ না নিলেও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আমরা বিষয়টি দেখবো।’

প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরীকে রাতভর র‌্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ তার সহযোগীরা। ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ দিতে ক্যাম্পাসে আসেন ফুলপরী। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া, হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।

এদিকে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়ায় ১লা মার্চ জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার, ভুক্তভোগীকে তার পছন্দমতো সিট বরাদ্দ দেয়া ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই দিনই শেখ হাসিনা হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করে প্রশাসন। পরে ৪ মার্চ ছাত্রলীগের অভিযুক্ত পাঁচ নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তাদেরকে দল থেকেও বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।