ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ফেনী প্রতিনিধি, রোববার, ১২ মার্চ ২০২৩ : ফেনীতে একের পর এক বহুতল ভবন গড়ে উঠলেও সেসব ভবনে আগুন বা দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের কোনো সক্ষমতাই নেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের। মানুষ অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বাস করছেন এসব বহুতল ভবনে। এদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, সামর্থ্য অনুযায়ী তারা সচেষ্ট থাকেন জানমালের নিরাপত্তায়।
Advertisement
ফেনীর শহর ও উপশহরে গত দেড় দশকে গড়ে উঠেছে ছয় তলার অধিক উঁচু ৯০টি অনুমোদিত বহুতল ভবন। অনুমোদনহীনের সংখ্যাও কম নয়। যেখানে বাস করছেন হাজারো পরিবার। রয়েছে অফিস ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। অথচ ফেনীর ফায়ার স্টেশন ৫টির একটিতেও ছয় তলার উঁচু বহুতল ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণের নেই সক্ষমতা। নেই সুউচ্চ ক্রেন, ল্যাডার, ফায়ার বল, কুশন, কেমিক্যাল টিমসহ আধুনিক সরঞ্জাম।
Advertisement
বহুতল ভবন নির্মাণের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মানা হয়নি অনেক ক্ষেত্রে। যেসব ভবনে আংশিক মানা হয়েছে সেগুলোও অকার্যকর।
এদিকে ২০১৬ সালে সরকারিভাবে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ ঘোষণার পর এসব বহুতল ভবনের আবাসিক ফ্ল্যাটগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে সিলিন্ডারের গ্যাস । সব জেনেও ঝুঁকি নিয়েই বাস করছেন সবাই।
Advertisement
১৮ তলা একটি বহুতল ভবনের মালিক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা সরকারের অনুমোদন নিয়ে অগ্নি নির্বাপণের সকল নিয়মনীতি মেনে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ভবন করে আজ অসহায়। সরকার যখন বহুতল ভবনের অনুমোদন দিয়েছে ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বও তাদের।’
একই ভবনের ১২ তলার বাসিন্দা খালেদ খান বলেন, ‘যখন গণমাধ্যমগুলোতে নগরীর অগ্নিকাণ্ড ঘটনার উদ্ধার তৎপরতা দেখি তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। কারণ আমরা কখনও দুর্ঘটনার শিকার হলে আমাদের জানমাল উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা নেই।’
আরেকটি বহুতল ভবনের ১৩তলার বাসিন্দা মনি বেগম বলেন, ‘জমি কিনে বাড়ি করার সামর্থ্য নেই। তাই ফ্ল্যাট কিনেছি। এখন মনে হয় ফ্ল্যাটের সঙ্গে মৃত্যুঝুঁকি ফ্রি পেয়েছি। সবসময় আতঙ্কে দিন কাটে।’
Advertisement
ফেনীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসদ্দী বলেন, ‘ফেনী দেশের যোগাযোগের নাভি। এখানকার প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ অবিশ্বাস্য। বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলের ফলে এখন নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। তাই চাহিদার কারণে আবাসনে বিনিয়োগ করছে সবাই। খুব সহসাই ফেনী আবাসন নগরীতে পরিণত হবে। তবে এখন পর্যন্ত ফেনীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ছয়তলা ভবনের উঁচুতে অপারেশন করার সক্ষমতা নেই। এ বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে লিখিতভাবে দফায় দফায় জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার দফতরের মহাপরিচালক ইতিবাচক। তবে সক্ষমতা অর্জনের আগে বহুতল ভবনগুলোতে নিয়মনীতি নির্দেশনার বিষয় তদারকি ও জনসচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।’
ফেনী পৌর সভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, ফেনীতে ৭ থেকে ১৮ তলার এমন শতাধিক বহুতল ভবনের আগুনসহ সকল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ফেনীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। ফায়ার স্টেশনের সক্ষমতা বাড়ানো না গেলে চরম মাশুল গুনতে হতে পারে।’
জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, পানিবাহী ৬টি, পাম্পবাহী ৫টি, সরঞ্জামবাহী ২টি গাড়ি ও একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ১০৭ জন ফায়ারম্যানকে জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করতে হয়।