ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বুধবার, ০৮ মার্চ ২০২৩ : সময় আনুমানিক মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল চারটা বেজে ৪৫ মিনিটি। রাজধানীর গুলিস্তানে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের পাশের সাত তলা ভবনে হঠাৎ বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই ধংসস্তুপে পরিণত হয় পুরো এলাকা। বিস্ফোরণে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
Advertisement
সাততলা ভবনের বেসমেন্ট এবং প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়েছে। পাঁচতলা ভবনটির নিচের তলাও পুরোপুরি বিধ্বস্ত। ধারণা করা হচ্ছে, ভবনটির বেসমেন্ট বা নিচতলাতেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। আহত অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
বিকেলে হঠাৎই বিষ্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো সিদ্দিক বাজার ও আলু বাজার এলাকা। কিছু বুঝে ওঠার আগে দিগ-বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে পথচারীরা। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো এলাকা। ঘটনাস্থলে পড়ে ছিলো রক্তাক্ত হতাহত অসংখ্য মানুষ।
Advertisement
বিস্ফোরণে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা এবং আরেকটি ভবন পাঁচতলা। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেসমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়েছে। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলাও বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দুই ভবনের পাশের ভবনগুলোও।
শুধুমাত্র ভবনই নয়। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তায় চলা যাত্রীবাহী বাসসহ বেশ কিছু যানবাহন। হতাহত হয় সেসব যানবাহনের যাত্রীরাও।
ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলো ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয়। দ্রুতই তারা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে একের পর এক বের করে আনা হয় হতাহতদের।
Advertisement
কেবল ভবন নয়। হতাহত হন রাস্তার পথযাত্রী। গাড়ির যাত্রী। দোকানের ব্যবসায়ী অসংখ্য মানুষ। হতাহতদের নিয়ে একের পর হাসপাতালে ছুটে যায় অ্যাম্বুলেন্স।
ঘটনাস্থলে বাড়তে থাকে উৎসুক মানুষের ভীর। তাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় পুলিশ। ভবনের ধংসস্তুপের ভেতর থেকে কিছুক্ষণ পরপরই মরদেহ উদ্ধার করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে উদ্ধার করা হয় আহত অন্তত ৭০ জনকে। উদ্ধারকর্মীরা জানান, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ধসে না পড়লেও ঘটনাস্থলের চারপাশের বড় একটি এলাকা তছনছ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কিছুটা ব্যাহত হয় উদ্ধার তৎপরতা।
বিস্ফোরণের পর পুরাণ ঢাকার সিদ্দিক বাজার, নয়াবাজার, নর্থ সাউথ রোড এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিস্ফোরণের পর বিকাল ৫টা থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পর তা আবার চালু করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিস্ফোরণের পর থেকে আশপাশের অলি-গলিতে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। ঘটনার প্রভাব পুরানো ঢাকাসহ মতিঝিল ও রমনা এলাকায় পড়েছে। ফলে পুরো এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
উদ্ধার কাজে ব্যাগ পেতে হয় উৎসুক জনতার কারণে। স্বেচ্ছাসেবী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বারবার মাইকিং করে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তারা ঘটনাস্থল থেকে সরতে নারাজ, যা রীতিমতো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশ ও ফার্য়ার সার্ভিস এবং স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা সড়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে জনতার কোনো সারা নেই। কেউ দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনা দৃশ্যাবলী দেখছে,কেউ ভিডিও করছে,কেউ আবার ফেসবুক লাইভ করছে। সরে যেতে বললেও কারো কোনো সাড়া ছিলো না।
Advertisement
ক্ষতিগ্রস্ত দুই ভবনে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ঘটনাস্থলে কাজ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। ঘটনার পরপরই সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে কাজ শুরু করে। এরপর সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও র্যাব কাজ শুরু করে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে র্যাব ও সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা। ঘটনাস্থলে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছেন তারা। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হবে।
সেনাবাহিনীর ৫৭ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কমান্ডিং অফিসার মেজর মো. কায়সার বারীর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিস্পোসাল ইউনিট, ১২ সদস্যের মিলিটারি পুলিশ এবং ডাক্তারসহ তিনটি অ্যাম্বুলেন্স গুলিস্তানে ভবন বিস্ফোরণস্থলে কাজ করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানিয়েছেন, ভবনের ভেতরে গ্যাসের গন্ধ পেয়েছেন ফায়ারের কর্মীরা। তবে, এখনই বিষয়টি বলা যাচ্ছে না কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে উঠে আসবে বিস্ফোরণের কারণ।
গুলিস্তানে সাততলা ভবনের বেজমেন্টে ক্যাফে কুইন নামে একটি রেস্টুরেন্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। পৌর ভবন নামের ওই বাণিজ্যিক স্থাপনার মালিক মৃত রেজাউল রহমান। এই ভবনের সঙ্গে লাগোয়া আরও তিনটি ভবন বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো হলো- চায়না পয়েন্ট, কাদের ম্যানশন ও নামহীন একটি ভবন।
গুলিস্তানে বিস্ফোরণের পর সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল দেখতে গিয়ে ডিএমপি অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ মহিউদ্দিন বলেন, বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে বলা খুবই মুশকিল। সালফারের গন্ধ বা বিস্ফোরকের গন্ধ ক্লিয়ার বোঝা যায়নি। কোনো ধরনের স্প্লিনটার আমাদের চোখে পড়েনি। আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসও কাজ করছে।
বিল্ডিং ধসে পড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। আমরা খতিয়ে দেখছি এ ঘটনাটি কীভাবে হয়েছে। এখন বিদ্যুৎ নেই। সেসব বিষয় দেখতে হচ্ছে। আশপাশের এলাকা নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে।