আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি,বুধবার, ০১ মার্চ ২০২৩ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকায় ভোট দিলেই এদেশের উন্নতি হয়, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আর অত্যাচার, নির্যাতন ছাড়া বিএনপি কিছুই দিতে পারে না।

তাই আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট চেয়েছেন নৌকার কাণ্ডারি ও আওয়ামী লীগ সভাপতি।

Advertisement

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার সদরে হেলিপ্যাড মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান। দুই যুগ বছর পর কিশোরগঞ্জে আবারো কোনো সমাবেশে কথা বললেন তিনি। এনিয়ে মানুষের মধ্যে ছিলো ব্যাপক উৎসাহ।

দীর্ঘ ২৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী আসবেন। তাই হাওর বেষ্টিত কিশোরগঞ্জ সেজেছে উৎসবের রঙে।  উৎসবের শুরুটা হয় সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই। দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে নৌকা আর ট্রলারে করে মিঠামইনের হেলিপ্যাড মাঠের সুধি সমাবেশে আসতে থাকে মানুষ। যার হাত ধরে বদলে গেছে হাওর বেষ্টিত ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম; সেই প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে।

ভাটি অঞ্চলের আওয়ামী লীগ কর্মীদের অপেক্ষার শেষ হয় বিকাল তিনটায়। যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হন মিঠামইনের হেলিপ্যাড মাঠের জনসভায়। তার কয়েক ঘণ্টা আগেই বিশাল হেলিপ্যাড মাঠ কোণায় কোণায় পূর্ণ হয়ে যায়। তাদের সামলাতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

বারবার নৌকাকে বিজয়ী করায় হাওরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। বলেন, নৌকায় ভোট এসেছে বলেই হাওর এখন উন্নত জনপদ। ফসল রক্ষায় করা হবে উড়াল সড়ক। তিনি বলেন, দুর্গম অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করছে বর্তমান সরকার। আমি ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি যে হাওর, বিল ও জলাভূমি এলাকায় সব সড়ক এলিভেটেড হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সব সড়ক উঁচু করা হবে, যাতে বর্ষাকালে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয়। মাছ ও নৌকা চলাচলে বাধা না পড়ে। স্থানীয় যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত না হয়। এতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিলেট ও ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে। হাওর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে মিঠামইনের ক্যান্টনমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

সুধি সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা আমাদের প্রতীক। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজকে কিশোরগঞ্জ আর অবহেলিত নয়। আজকে একটি উন্নত জেলা হয়েছে।

আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আগামীতেও নৌকা মার্কার সরকার আসলে আপনাদের উন্নতি হবে, দেশের উন্নতি হবে। এই হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সার্বিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

শেখ হাসিনা উপস্থিত জনতার কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, আপনাদের কাছে এই আবেদন জানাই। আপনারা ওয়াদা করেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। এই সময় উপস্থিত জনতা হাত তুলে ‘নৌকা নৌকা’ স্লোগান দিয়ে ওয়াদার অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জের স্থানীয় ভাষায় ‘নৌকা বায়া দে নৌকা বায়া দে’ স্লোগান ধরেন।

পরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশের সম্পদ লুট করেছে। সেই সম্পদ বিদেশে পাচার করে তারা এখন আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। দেশের মানুষ যখন কষ্ট পায়, তখন বিএনপি তাদেরকে আরও কষ্ট দেয়। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। যারা বোমা মেরে, আগুন দিয়ে মানুষকে হত্যা করতে পারে তারা কখনও কল্যাণ করতে পারে না।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত বা ২০ দলীয় জোট যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। আর আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়, ফসলের উৎপাদন বাড়ে, মাছের উৎপাদন বাড়ে, ফসলের উৎপাদন বাড়ে। মানুষ খেয়েপরে সুখে থাকে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।

তিনি বলেন, আমি যখন ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে আসি, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে দেখেছি মানুষের দুর্দশা। পেটে খাবার নেই, পরনে ছিন্ন বস্ত্র, রোগে চিকিৎসা নেই। ধুকে ধুকে মারা যায়। গায়ে হাড় আর চামড়া। চলাচলের ব্যবস্থা নেই। একটা দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হতো। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর এদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে। এরপর আবার আসে ওই বিএনপি-জামায়াত। আবার লুটপাট শুরু করে। অর্থপাচার, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখন ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। আমাদের ফসল উৎপাদন বাড়ে, মাছ উৎপাদন বাড়ে, তরিতরকারি ফলমূল উৎপাদন বাড়ে, মানুষ খেয়েপরে সুখে থাকে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। অন্তত ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে।

জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। মা-বাবা ভাই সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব রিক্ত। এই দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। তিনি তার নিজের জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা-ভাইয়েরা। আজকে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পাই আমার হারানো বাবার স্নেহ, আমার হারানো মায়ের স্নেহ, হারানো ভাইয়ের স্নেহ। আপনারা সবাই কষ্ট করে এসেছেন। বিদায়ের আগে এইটুকু বলতে পারি, রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি দেবার কিছু নাই আছে শুধু ভালবাসা দিয়ে গেলাম তাই।

Advertisement

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরীফ কামাল প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট প্রদান করেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছোট ভাই অধ্যক্ষ আব্দুল হকের সভাপতিত্বে সুধি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কিশোরগঞ্জ জেলা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান এবং কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।