একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় নিয়ে রিভিউ আবেদন করা করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
অপরদিকে জামায়াতের আমির নিজামীর মামলার রায়ের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত দণ্ডই বহাল থাকবে। তিনি বলেন, আমি আশা করছি নিজামীর চরম দণ্ড অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাঈদীর রায়ের কপি পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা হবে। সাঈদীর মামলায় প্রকাশিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি ট্রাইব্যুনাল হয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর ৫ বিচারপতির স্বাক্ষরের পর সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে সাঈদীর মামলায় ৬শ’ ১৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ হয়।
সুপ্রিমকোর্টের কোর্টের নিদের্শনা অনুযায়ী, আপিল বিভাগের রায়ের প্রকাশের পর ১৫ দিনের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার বিধান রয়েছে।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। বেঞ্চের অন্য চার বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণ হয়।
আপিলে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। ১০ নম্বর অভিযোগ বিসাবালিকে হত্যার, ১৬ নম্বর অভিযোগ তিন নারীকে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণের এবং ১৯ নম্বর অভিযোগ প্রভাব খাটিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করার।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। ৬ নম্বর অভিযোগ লুণ্ঠনের, ১১ নম্বর হামলা ও লুণ্ঠনের এবং ১৪ নম্বর অভিযোগ ধর্ষণের। ৮ নম্বর অভিযোগের অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে সাঈদীকে খালাস দেয়া হয়। একই অভিযোগের অংশবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে তাঁকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। অষ্টম অভিযোগটি হত্যা ও অগ্নিসংযোগের।
এ ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ৭ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। সপ্তম অভিযোগ নির্যাতন ও বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ।
৮ নম্বর (ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা) ও ১০ নম্বর অভিযোগের (বিসাবালি হত্যা) দায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।