যেভাবে অবৈধ অস্ত্র বৈধ দাবি করতো পলাশ এন্ড কোং

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি).ঢাকা প্রতিনিধি, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : ভারত থেকে অবৈধ পথে অস্ত্র এনে ভুয়া লাইসেন্স তৈরি করে বাংলাদেশে বিক্রি করতো একটি চক্র। এসব অবৈধ অস্ত্রকে বৈধ দাবি করে বিক্রি করা হতো ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের কাছে। চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

Advertisement

দেশে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া এখন বেশ কঠিন। আর, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভুয়া ও জাল লাইসেন্স তৈরির মাধ্যমে লাইসেন্সসহ অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করতেন চোরাকারবারীরা।

র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর একটি যৌথ দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, পলাশ শেখ, মনোয়ার হোসেন, রশিদুল ইসলাম, নাজীম মোল্লা, মারুফ হোসেন ও নাইমুল ইসলাম।

অভিযানের সময় একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ওয়ান শুটার গান, সাতটি একনলা বন্দুক, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, পিস্তলের আটটি গুলি, ওয়ান শুটারের দুটি গুলি, একনলা বন্দুকের ৬৭টি গুলি, ০.২২ বোর রাইফেলের ৪০টি গুলি, ১১টি জাল লাইসেন্স উদ্ধার করে র‌্যাব।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই চক্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই চক্রের প্রধান হলেন পলাশ শেখ।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, বৈধ অস্ত্র থাকলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশি বেতনে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি মেলে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে একটি চক্র পাশের দেশ থেকে অবৈধ পথে অস্ত্র আনতো। তারপর সেই অস্ত্রের জাল লাইসেন্স তৈরি করে নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে বিক্রি করতো।

শুধু তাই নয়, যাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতো তাদেরকে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেশি বেতনে চাকরি পাইয়ে দিতো। বিনিময়ে চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা নিতো অভিযুক্তরা।

এছাড়া চক্রটি জাল লাইসেন্স তৈরি করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছেও চড়া দামে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করতো।

Advertisement

চক্রের মূলহোতা এসএসসি পাস পলাশ ২০১৩ সালে চাকরির জন্য রাজধানীতে আসেন। এরপর তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভুয়া লাইসেন্স করা একটি বন্দুক কিনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে বেশি বেতনে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি শুরু করেন।

পরে তিনি নিজেই অবৈধ পথে অস্ত্র এনে বিক্রি শুরু করেন। চার থেকে পাঁচ জনের একটি দল গড়ে তোলেন। তার নেতৃত্বে চক্রটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ, বিভিন্ন দপ্তরের সিল তৈরি করে জাল লাইসেন্স বানিয়ে অবৈধ অস্ত্র বিক্রয় করতে থাকেন।

গ্রেপ্তার মনোয়ার ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি শুরু করেন। চাকরির সুবাদে পলাশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে অষ্টম শ্রেণি পাস মনোয়ারের। পলাশের সহযোগিতায় দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি একটি ভুয়া লাইসেন্স করা একনলা বন্দুক সংগ্রহ করেন।

বেশি বেতনে একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পরে পলাশের সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচা শুরু করেন তিনি। পলাশের নির্দেশনায় মনোয়ার সীমান্তের বিভিন্ন জেলা থেকে অবৈধ পথে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করতেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তা বিক্রি করতেন।

গ্রেপ্তার রশিদুল স্থানীয় এক মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। ২০১৯ সালে চাকরির জন্য তিনিও ঢাকায়

আসেন। চাকরির সুবাদে পলাশের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি ভুয়া লাইসেন্সকৃত অবৈধ অস্ত্র কিনে বেশি বেতনে একটি অর্থ প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন। তিনি আগ্রহী চাকরি প্রার্থীদের পলাশের কাছে পাঠাতেন।

নাইমুল ইসলাম স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে করেন। ২০২০ সালে তিনি চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসেন। পরে পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে পলাশের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। লোভনীয় বেতনের প্রস্তাবে আকৃষ্ট হয়ে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র কিনে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেশি বেতনে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেন। তিনিও বিভিন্ন সময়ে আগ্রহী চাকরি প্রার্থীদের পলাশের কাছে পাঠাতেন।

Advertisement

গ্রেপ্তার নাজিম মোল্লা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ২০২২ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় এসে এবং পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে তার পলাশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরে তিনি আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া লাইসেন্সকৃত অবৈধ অস্ত্র কিনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেন।

এছাড়া গ্রেপ্তার মারুফ স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০২৩ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন। পরে তিনি পলাশের মাধ্যমে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র কিনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করেন।