ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : দালালচক্রের সদস্যরা প্রথমে ইতালিতে উন্নত জীবনযাপনের লোভ দেখায়। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে আগ্রহী যুবকদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে তুলে তাদের দেওয়া হয় সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের হাতে। এরপর তাদের নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা। এমনকি পরিবার মুক্তিপণ দিতে রাজি না হলে অনেককে দিতে হয় জীবন। এমন প্রলোভনের শিকার হয়েছেন মাদারীপুর সদর উপজেলা মস্তোফাপুর ইউনিয়ন দক্ষিণ খাগছাড়া গ্রামে ৯নং ওয়ার্ডের আয়ুব আলী কাজীর ছেলে বসির কাজী (২৮)।
Advertisement
বসিরের বাবা আয়ুব আলী কাজী বলেন, ২০২২ সালের জুন মাসে ছেলেকে লিবিয়া দিয়ে ইতালিতে পাঠানোর জন্য ১০ লাখ টাকায় চুক্তি হয় একই ইউনিয়নের সুচারভাঙ্গা গ্রামের নাদু বেপারীর ছেলে সোহেল দালালের সঙ্গে। পরে আমার ছেলেকে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া নেন। লিবিয়ায় পৌঁছানো পরে আবার গেইম করানোর জন্য চুক্তি হয় ২ লাখ টাকায়। পরে তিনি গেইম বা ভিসা করানোর জন্য একইস্থানে ছয় মাস রেখে মাফিয়া শরীফের কাছে আমার ছেলেসহ বেশ কয়েকজনকে বিক্রি করে দেয়। লিবিয়ার জিমনেসিয়ানে বন্দি রেখে কয়েক মাস পরে ওই দালাল আমাদের কাছে আরও ১১ লাখ টাকা দাবি করেন। না দিলে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। আমার ছেলেকে নির্যাতন করার দৃশ্য মোবাইল ফোনে দেখায়। এরপর আমরা তাকে আমাদের জমি ও বাড়ি বিক্রি করে ১১ লাখ টাকা দিলে এর কয়েকদিন পরে গেইম করায়। গেইমের তিনদিনের মাথায় আবার ধরা খায়। পরে অন্য দালালের মাধ্যমে ৪ লাখ দিয়ে মাফিয়ার থেকে আমার ছেলেকে রক্ষা করি। পরে চেয়রাম্যান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও স্যারকে দিয়ে লিবিয়া রাষ্ট্রে চিঠির মাধ্যমে আমার ছেলেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে আনতে পেরেছি।
লিবিয়া থেকে ফিরে এসে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বসির কাজী বলেন, গলায় পা দিয়ে মারধর করতো, লাথি মারতো, মাথা ধরে দেয়ালে ঠুকে মারতো, ইলেকট্রিক শক দিত। পানি খেতে চাইলে বাথরুম থেকে বদনায় করে পানি এনে দিত। এইভাবে বিদেশ যাওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে অন্যের জমিতে কাজ করে খাওয়া অনেক ভালো। এমন নির্যাতনের দৃশ্য দেখে বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনরাও আমার জন্য নিঃস্ব হয়ে গেছে। এই সোহেল দালালের কারণে আজকে আমরা নিঃস্ব হয়েছি তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে এই সোহেল দালালের সঠিক বিচার ও আমার পাওনা টাকা চাই।
Advertisement
স্থানীয় খোকন মিয়া বলেন, যে একই এলাকার দালাল সোহেল বেপারী ইটালি নেওয়ার কথা বলে বসিরের কাছে থেকে প্রথমে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে আবার ১০ লাখ টাকা নিয়েছে ।এরকম করে দফায় দফায় ২৮ লাখ টাকা নিয়েছে। এই টাকা যে নির্যাতন করেছে সেই ভিডিও দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারি নাই। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি সরকার যেন তার কঠিন বিচার করে।
বসিরের মা রাজিয়া বেগম বলেন, সোহেল আমার ছেলেকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় রেখে আমার ছেলেকে টাকার জন্য নির্যাতন করেছে। পাওনাদার টাকার জন্য আমাদের বাড়িতে প্রতিনিয়ত আসে। টাকা দেওয়ার মতো আমাদের সামর্থ্য নেই। আমাদের তো এখন ভাত খেতে কষ্ট হয়ে যায়। এই সোহেল দালালের বিচার চাই প্রশাসনের কাছে।
টাঙ্গাইলে কর্মরত র্যাব সদস্যরা হাফিজুর রহমান নামে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকে আটক করেছে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা মহানগরের নয়াপল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তির নাম হাফিজুর রহমান (৪৫)। তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পোড়াবাড়ি (নাগবাড়ি) গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের ছেলে।
Advertisement
র্যাব-১৪ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিপিসি-৩, টাঙ্গাইল ক্যাম্পের অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়েরের নেতৃত্বে একদল র্যাব সদস্য মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নয়াপল্টন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে ৮টি পাসপোর্ট, দুইটি চেক বই, একটি ডেবিট কার্ড ও নগদ ১০ হাজার ১৬০ টাকাসহ লিবিয়ায় মানবপাচার চক্রের সদস্য হাফিজুরকে আটক করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, হাফিজুর তার গ্রামের লিটন নামে যুবককে ভালো বেতন ও থাকা-খাওয়ার সুবিধার নিশ্চয়তায় লিবিয়ায় পাঠায়। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর কয়েক ব্যক্তি লিটনকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে তার বাবার কাছে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। লিটনের বাবা ছাত্তার ছেলের কথা ভেবে হাফিজুরকে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা দেন।
গত (৯ ফেব্রুয়ারি) ছাত্তারের ইমু নম্বরে লিটনকে মারধরের ভিডিও পাঠায় এবং আরও ১৩ লাখ টাকা দিতে বলেন। অন্যথায় লিটনকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় লিটনের বাবা ঘাটাইল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে টাঙ্গাইলে কর্মরত র্যাব সদস্যরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অবস্থা শনাক্ত করে ঢাকা মহানগরের নয়াপল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাফিজুরকে আটক করে।