‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার …. ছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম’।
নচিকেতার কণ্ঠে গাওয়া এই গান কারো চোখ ভেজেনি, বোধ করি এমনটা নেই। আবার গানটি শুনে ঘরে গিয়ে সেই মাকেই অপমান-অবহেলা করেনি এমনটা নেই, এটাও বলা যায় না। আবার ব্যতিক্রম হলেও এমনও আছে মাকে অপমান অপদস্ত করার পর সন্তান অনুশোচনায় কেঁদে বুক ভাসিয়েছে।
Advertisement
কী বিচিত্র মানুষের বাস এই পৃথিবী। বাড়ি-গাড়ির তুলনা দিয়ে যখন গানটি গাওয়া হয় তখন একটা ধারণা আসে, আসলে অর্থ-বিত্তশালীরাই বুঝি মা-বাবাকে অবহেলা করে কিংবা গরিব-দুঃখীদের মধ্যে এই প্রবণতা নেই। বাস্তবতা তেমন নয়, অবহেলা ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত এসব বিচার করে না। এখানে মানুষ আর অমানুষ দুটি বিষয় আছে। গবিব কিংবা ধনী যে কোনো সম্প্রদায়েই এই দুইয়ের দেখা পাওয়া যায়। বাস্তবতা হচ্ছে অসংখ্য মানুষের মধ্যেই অমানুষদের দেখা মিলে।
রেলস্টেশনে কিংবা মসজিদের পাশে সেই চিত্রটিই আমাদের চোখে পড়ে। মাঝে মাঝে পত্রিকার পাতায়ও এমন অবহেলিত মায়ের ছবি ছাপা হয়। কী নিষ্ঠুর মানুষ আমরা। সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হলো রাজধানীর তেজগাঁও কুনিপাড়ার রাস্তায় পড়ে থাকা এক বৃদ্ধার ছবি। কী পাষণ্ড হতে পারে মানুষ। ছবিটি দেখে যে কেউই মন থেকে উচ্চারণ করবেন এই বাক্য। ময়লা নর্দমার পাশে রাস্তাতেই পড়ে আছেন এক বৃদ্ধা। ওঠে বসার ক্ষমতা নেই বৃদ্ধার। কেউ তাকে এখানে রেখে গেছে।
বৃদ্ধার পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে মনে হয় না, হতদরিদ্র কোনো পরিবারের মা তিনি। মধ্যবিত্ত হতে পারেন।অসংখ্য উৎসুক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়, একজন পুলিশও আছে তার পাশে। হঠাৎ করে মনে হতে পারে কোনো বেওয়ারিশ লাশ যেন।
Advertisement
আসলেও এটা মূল্যবোধের লাশ, আমাদের বিবেক ধ্বংসের প্রতীক। কুনিপাড়ার ময়লা ড্রেনের পাশে শুয়ে থাকা এই বৃদ্ধার সন্তানেরা হয়তো নচিকেতার গানের সেই সন্তানের মতো মস্ত ফ্ল্যাটের মালিকও হতে পারে, কিংবা নাও হতে পারে। সে যেমনই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে-নচিকেতার গানের কথার সঙ্গে কতটা মিল পাওয়া যায় পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত এই বৃদ্ধার ছবিতে।