ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি,সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে রাস্তায় নগ্ন করে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভুক্তভোগী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় রোববার (১৮ডিসেম্বর) সকালে মারধর, চাঁদা দাবি ও পর্নোগ্রাফি আইনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. বাক্কারকে প্রধান আসামি করে আরও ৭ জনের লাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচ থেকে ছয় জনকে আসামি করে মামলা করেন তিনি। পুলিশ আটক তিন জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- পৌর এলাকার বটতলাহাট এলাকার মো. সোহাগ (২৮), কালীগঞ্জ বাবুপাড়ার মো. আনাস (২৭) ও জয়নগর মীরপাড়ার মো. সাকিল (৩২)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি এ কে এম আলমগীর জাহান বলেন, ভিডিও ফুটেজটি বিশ্লেষণ করে পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত তিন জনকে আটক করে। রোববার সকালে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী থানায় মামলা করলে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে জয়নগর মীরপাড়ার রায়হান আলীর বাড়িতে পাওনা ৩০ হাজার টাকা চাইতে গিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। তখন বাড়ির বাইরে কয়েকজন যুবক তাকে আটক করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ওই এলাকার মো. আবু বাক্কারের (৩২) নেতৃত্বে যুবকেরা কিল-ঘুষি ও লোহার রড দিয়ে তাকে পেটান। এরপর বিবস্ত্র করে রাস্তা দিয়ে প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে নিয়ে যান এবং তার কাছে থাকা সাড়ে ১৪ হাজার টাকা ও একটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। তাকে বটতলাহাট এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পর ওই ব্যবসায়ীর স্বজনেরা এগিয়ে এলে আসামিরা পালিয়ে যান। রাস্তায় হাঁটানোর সময় তারা ভিডিও ধারণ করেন এবং ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় আসামিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেন।
ওসি আলমগীর জাহান আরও বলেন, লোকলজ্জা ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে ওই ব্যবসায়ী তাৎক্ষণিকভাবে থানায় অভিযোগ করেননি। ভিডিও ফুটেজটি হাতে পাওয়ার পর পুলিশ গতকাল রাতে তার বাড়িতে গিয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে আজ তিনি মামলা করেন।
বটতলা হাট এলাকার এক প্রত্যক্ষদর্শী মুদি দোকানী মাহবুবুর রহমান বলেন, ওই ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে। তাকে উলঙ্গ অবস্থায় হাঁটিয়ে ওই ব্যক্তির ভাইয়ের বাড়ির সামনে থেকে ঘুরিয়ে আনা হয়। যারা ওই ব্যক্তিকে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে প্রকাশ্যে রাস্তায় ঘুরিয়েছেন, তারা সবাই স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির লোকজন।
এদিকে নির্যাতিত ব্যবসায়ী আজ রোববার সন্ধ্যায় চ্যানেল 24 কে জানান, স্থানীয় এক প্রবাসীর কাছে ৩০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। তার স্ত্রী সম্পর্কে ভাগ্নি হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসা যাওয়ার সময় তার ছেলে ও ছেলের বউ বাসায় উপস্থিত ছিল। এ সময় কিছু বখাটে আমাকে আটকিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হলে মারপিট করে চাকু দেখিয়ে নগদ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা ও একটি স্মার্ট ফোন ছিনিয়ে নেয়।
তিনি বলেন, এ সময় আমার জ্যাকেট, প্যান্ট ও গেঞ্জি জোরপূর্বক খুলে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরায় এবং ভিডিও করে। পরবর্তীতে আসামিরা তাদের মোবাইলে ধারণকৃত তার অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের কথায় সাড়া না দেয়ায় আসামিরা পরস্পরের যোগসাজসে ধারণকৃত ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, এমন বেইজ্জত করা হয়েছে, যাতে এখন মনে হচ্ছে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনও উপায় নাই। দুই মেয়ে কলেজে পড়ে, মুখ দেখাতে পারছি না কারও সামনে। তাদের অনেক অনুরোধ করেছি যে, আমাকে আইনের হাতে তুলে দাও। পুলিশের হাতে তুলে দাও। অপরাধ করলে শাস্তি পাব। কিন্তু এমন কাজ করো না। তারা শুনেনি। মধ্যযুগীয় কায়দায় আমাকে নির্যাতন করে। এ ঘটনার আমি সুষ্ঠু বিচার চাই আইনের কাছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্যাতিত ওই ব্যবসায়ীর ভাগ্নে বলেন, ‘চাঁদা না দেয়ায় তার মামাকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানো হয়। এ সময় আমি তাকে একটি লুঙ্গি দিতে গেলে আমাকেও তারা ছুরি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বখাটে যুবকরা প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থাকে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাপোড়নে পড়তে হবে। এ নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন পুরো পরিবার।’
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বটতলাহাট এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলার ১ নম্বর আসামি আবু বাক্কার চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসুর রহমানের চাচাতো ভাই। তার নেতৃত্বে ওই এলাকায় একটি সন্ত্রাসী চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলার সাহস পান না। তার ওপর মেয়রের ছায়া আছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন না।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আবু বাক্কার এলাকা ছাড়া।
এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।