ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ : বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেক এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। সেদিন তারা (নয়াপল্টনে বিএনপি) বিআরটিসির বাস পুড়িয়েছে। এটা তাদের টেস্ট ছিল। নেতাকর্মীদের বলছি, সবাই প্রস্তুত থাকুন। মেহনতী মানুষের ওপর আঘাত করলে তাদের ক্ষমা নেই। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুই সিটির মেয়রদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে যৌথ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার আঘাত করলে আমরা সহ্য করব না। আমরা ২০২২ পর্যন্ত সহ্য করেছি। এখন আর করব না। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে সরকার হটানো যাবে না। যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দিতে আসবে, সে হাত দিয়ে তাদের পোড়াতে হবে। ওদের কিসের ক্ষমা। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না। গণতন্ত্র তাদের মুখে মানায় না। তিনি বলেন, তৃণমূলের মানুষ ক্ষমতাবান হউক এটা কেউ চায় না, শুধু আওয়ামী লীগ তা করে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট চুরি করে না। জনগণের ভোট জনগণের হাতে তুলে দেয়। বিএনপির স্বভাব তো যায় না। তারা ২০০১ সালে গ্যাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে। সে সময় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। এখানে নাছিম আছেন, সাবের হোসেন চৌধুরীর ওপর যে অত্যাচার করা হয়, বিএনপি তো মনে করেছিল তারা মারা গেছে। বিএনপি আমাদের প্রতিটি নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি দখল করে পুকুর কেটে কলা গাছ লাগানো হয়েছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা প্রতিশোধ নিতে পারতাম, কিন্তু আমরা তা করিনি। নির্বাচনী ইশতেহার বিএনপি বাস্তবায়ন করেনি। সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি। আওয়ামী লীগ কারো পকেটের সংগঠন না। বিএনপির জন্ম জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে। আওয়ামী লীগ আসার পর এদেশের উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি ২০০১ সালে লবিষ্ট নিয়োগ করেছিল। তারা টাকা দিয়ে আমি, আমার বোন কোথায় টাকা রেখেছি খোঁজ করেছে। তারা লুটে খেতে ক্ষমতায় এসেছিল। আওয়ামী লীগ দিতে এসেছে। মারতে এলে হাত ভেঙে দেওয়া হবে বিএনপি এবার যে হাতে মারতে আসবে, সে হাত ভেঙে দেওয়া হবে বলে যৌথসভায় বলেন শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান বলেন, ‘৭৫-এর পর থেকে শুধু মার খেয়েছি। এবার যে হাতে মারতে আসবে, সে হাত ভেঙে দেব।’ ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। ২০০১ সালের পর বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে।’ বিএনপি বিআরটিসি বাস পুড়িয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর আগুন দিতে গেলে সবার হাতে মোবাইল ফোন ভিডিও করে যে হাত দিয়ে আগুন দিতে যাইবে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে।’ বিএনপি বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ দিয়েছিল। এছাড়া ২০০১ সালে বিদেশিদের কাছে ধর্না দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। এবারও তারা একই চেষ্টা করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ধর্না দিয়ে লাভবান হয়েছিল। এবারও ভাবছে তাই হবে।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের বিষয়ে জানতে বিএনপি লোক নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু কিছুই পায়নি। তবে বিএনপি বিশ্বব্যাপী সম্পদের পাহাড় গড়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বব্যাপী টাকা রেখেছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘(২০০১ সালের পর) আওয়ামী লীগের এমন কোনো জনসভা নেই, যেখানে বিএনপি হামলা করে নাই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আহমেদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান ও আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও এই সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।