ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার , ৩১ অক্টোবর ২০২২ : অপেক্ষার দিন ফুরিয়ে আসছে। আর মাত্র দুই মাস। এরপরই চলতে শুরু করবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। ১০ সেট ট্রেন নিয়ে প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে এই রেল।
যেখানে ঘণ্টায় প্রায় ২৫ হাজারের বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবে। সেই সঙ্গে রেলের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে অনেক অপেক্ষার মেট্রোরেল।
উন্নত মহানগর ঢাকার অপরিহার্য অনুষঙ্গ সেই মেট্রোরেল বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। এই স্বপ্নের প্রকল্প ঢাকা শহরকে বর্তমান অবস্থা থেকে আধুনিক কসমোপলিটানে রূপান্তর করবে।
মানুষের ভোগান্তি দূর করতে, ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার জন্য বর্তমান সরকার ২০১২ সালে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলের পরিকল্পনা করে।
আসছে বিজয় দিবসেই ছুটবে সেই মেট্রোরেল। এ কারণে প্রতিদিন উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের পথে পরীক্ষামূলক চলাচল করছে রাজধানীবাসীর বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল।
পরীক্ষামূলক এই চলাচলের জন্য মোট ১৯টি ধাপ শেষ করতে হয়েছে। সেই ধাপগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়াই এই চলাচলের উদ্দেশ্য।
ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে ট্রেন। তাই সময় আর গতির মেলবন্ধন ঠিক করার পরীক্ষাও চলছে।
প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের পথে চলবে ১০ সেট ট্রেন। প্রতি সেট ট্রেনে থাকছে ছয় বগি। একেক বগিতে ৫৪ জনের বসার ব্যবস্থা। দাঁড়িয়ে ভ্রমণের জন্য আছে পর্যাপ্ত জায়গা।
একেকটি ট্রেনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৮৮ জন যাত্রী চড়তে পারবেন। সেই হিসেবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ঘণ্টায় যাতায়াত করবেন কমপক্ষে ৩০ হাজার যাত্রী।
এই পথের ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। স্টেশনগুলোতে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। প্রতি স্টেশনের দ্বিতীয় তলাটি যাত্রীরা ফুটওভার ব্রিজ হিসেবেও ব্যাবহার করতে পারবেন।
থাকবে নানা পণ্যের দোকান। তবে, তৃতীয় তলার প্লাটফর্মে উঠতে লাগবে টিকেট। গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা সব স্টেশনেই টিকেট কাটতে পারবেন। থাকছে মেট্রোপাসের সুবিধাও।
শুরুতে ১০ মিনিট পরপর মিলবে ট্রেন। পরে যাত্রীদের সুবিধার্থে প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর পর ট্রেন এসে দাঁড়াবে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য।
বিপত্তি বেধেছে কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া ও মিরপুর ১১ নম্বর স্টেশনে। এই তিন স্টেশনের সিঁড়ি নির্মাণে হিমশিম অবস্থা। কারণ চলাচলের জায়গার অভাব।
স্থানীয়রা বলছেন, চিঠি আসলেও কবে নাগাদ অধিগ্রহণ করা হবে; কতটুকু জমি অধিগ্রহণ করা হবে সেই তথ্য এখনও জানানো হয়নি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর এই কার্যক্রম শুরুর সম্ভাবনা নেই। ডিসেম্বরে প্রথম ধাপের মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলেও এই কাজ শেষ হতে সময় লাগবে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার পথে থাকবে ১৬টি স্টেশন। পুরো পথ চালু হবে আগামী বছর।
তখন ২৪ সেট ট্রেন ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলাচল করবে। পুরো পথটি চালু হলে ঢাকার যোগাযোগে যেমন গতি আসবে তেমনি জিডিপিতে যুক্ত হবে এক শতাংশ।
উদ্বোধনের মাত্র দু’মাস বাঁকি। মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি বিশেষায়িত পুলিশ বাহিনী। যা এখনো আটকে আছে প্রাথমিক পর্যায়ে।
মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ আসবে সরাসরি জাতীয় গ্রিড থেকে। এ জন্য উত্তরা ও মতিঝিলে দুটি ১৩২ কেভি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৮০ মেগাওয়াট আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮০ মেগা ওয়াট বিদ্যুতের জোগান থাকবে।
পরীক্ষামূলক চলাচলেই এখন মাসে কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছে। বাণিজ্যিক চলাচলে এই খরচ আরও বাড়বে। তারপরেও ঢাকার নগর পরিবহন ব্যবস্থাকে পাল্টে দেবে মেট্রোরেল।
উল্লেখ্য, ১৮৬৩ সালে লন্ডনে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছিল। যা এখন ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড’ এর একটি অংশ।
আর ১৮৬৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট রেল ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯০৪ সালে নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে প্রথমবারের জন্য খোলা হয়েছিলো।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান হলো প্রথম দেশ যারা ১৯২৭ সালে একটি পাতাল রেল ব্যবস্থা তৈরি করে। ভারত ১৯৭২ সালে কলকাতায় মেট্রোসিস্টেম নির্মাণ শুরু করে।
এর পরে ভারত অন্যান্য শহরেও মেট্রোরেল ব্যবস্থা তৈরি করে। বর্তমানে বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে ১৮০টি পাতাল রেল ব্যবস্থা চালু রয়েছে।