ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বরিশাল প্রতিনিধি, শনিবার , ২৯ অক্টোবর ২০২২ : বরিশাল শেরেই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) নার্স রফিকুল ইসলামের সাথে এক রোগীর আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ২০ মিনিট ব্যাপী ওই ভিডিওটি ইতিমধ্যে শেবাচিম’র কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ডাক্তার ও অন্যান্য নার্সদের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে পুরো হাসপাতাল জুড়ে সকলের নিকট একটি চাপা কৌতুহল বিরাজ করছে। সকলের মধ্যে একটাই প্রশ্ন যে হাসপাতালের একজন নার্স হয়ে কিভাবে রোগীর সাথে এমন অশ্লীল কর্মকান্ড করতে পারে।
এছাড়া সবাই অভিযুক্ত রফিকুলকে ধিক্কার জানাচ্ছে। রফিকুল বরিশাল সদর উপজেলা চরবাড়িয়ার ওয়াজেদ আলীর ছেলে ও শেবাচিম হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স। বর্তমানে সে হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স মহিলা ওয়ার্ডে কর্তব্যরত রয়েছে। এর পূর্বেও রফিকুল একাধিক নারীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে তাদের সাথে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়েছে। রফিকুলের এসম কর্মকান্ডের ফিরিস্তি শেবাচিম’র অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জ্ঞাত রয়েছেন। শুধু তাই নয় রফিকুলের এসব অনৈতিক কর্মকান্ড স্ত্রী শেবাচিম’র সিনিয়র স্টাফ নার্স তানিয়া বেগম জানতে পারলে গত ১৪ জানুয়ারী তাকে বাসার দড়জা বন্ধ করে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। পরে বিষয়টি জানতে পেরে শেবাচিম’র সেবা তত্ত্বাবধায়ক সেলিনা আক্তার উভয়কে ডেকে সতর্ক করে দেন।
ভোলার নার্সিং ইন্সট্রাক্টর তানিয়ার ভাই আফজাল হোসেন জানান, আমার ছোট বোন তানিয়াকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে রফিকুল বিয়ে করে। বিয়ের ১৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত রফিকুল কাবিননামা রেজিষ্ট্রী করেনি। অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে আমার বোন তানিয়ার উপর নির্মম নির্যাতন চালায় রফিকুল। বোনের এমন নির্মমতায় আমি এবং আমার পরিবার এ নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। রফিকুলের সাথে এক নারীর অশ্লীল ভিডিও’র বিষয়টি আমরাও শুনেছি। ওই ভিডিও নিয়ে কথা বলায় রফিকুল আমার বোনের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডের অন্যান্য নার্স ও স্টাফরা জানান, রফিক দীর্ঘদিন ধরে ওই ওয়ার্ডে আসা রোগী কিংবা তাদের স্বজনদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। পরে তাদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ স্থাপন মাধ্যমে প্রেম ও পরকীয়া সম্পর্ক জড়িয়ে পরে। আমরা রফিকুলের এসব কর্মকান্ড দেখলেও কখনো কিছু বলতে পারতাম না। কারন সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। তবে এসব অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে যখন রফিকুলের স্ত্রী তানিয়ার সাথে পারিবারিক বিরোধ হয় ও রফিক দড়জা বন্ধ করে তানিয়াকে নির্মম নির্যাতন চালায় তখন তার মুখোশ উন্মোচিত হয়। এখন পুরো হাসপাতালের সবাই রফিকুলের এসম অনৈতিক কর্মকান্ডের কথা জানে। এজন্য অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলার চেস্টা করে।
রফিকুল নগরীর সিকদার পাড়া এলাকায় কিছুদিন বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানেও বিভিন্ন নারীদের নিয়ে আসতো। এমনটাই জানিয়েছেন বাড়ির মালিক রেবা আক্তার। তিনি আরো জানান, রফিকুলের স্ত্রী তানিয়া হাসপাতালে গেলে সে ওই সুযোগে নারীদের নিয়ে বাসায় নিয়ে এসে অশ্লীল কর্মকান্ড চালাতো। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি রফিকুলকে আমার বাসা ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেই। আর ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সম্পর্কে বাড়ির আমিও জানতে পেরেছি।
স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের (স্বানাপ) শেবাচিম শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রফিকুলের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড আমরা জানতে পেরেছি। এছাড়া সে সম্প্রতি ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করেছে। এতে রফিকুলকে আমরা সংগঠন থেকে বহিস্কার করেছি। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি’র বিষয়টি আমরা জানি। আমার সংগঠন থেকে আশা করছি কর্তৃপক্ষ রফিকুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
রফিকুলের স্ত্রী তানিয়া বেগম জানান, রফিকুলের এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় সে প্রতিনিয়ত আমার উপর নির্যাতন চালাতো। সংসার জীবনে আমাদের দুটি সন্তান রয়েছে। সন্তানের কথা চিন্তা করে রফিকুলকে এসব থেকে ফিরে আসতে বলি। কিন্তু সে ফিরে আসেনি। এছাড়া আমাকে বিয়ের করার আগেও রফিকুলের একটি বিয়ে রয়েছে। ওই ঘরেও রফিকুলের সন্তান রয়েছে। ওই স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে সে আমাকে বিয়ে করে। এসব বিষয় আমি আগে জানতাম না। আমাদের বিয়ের পর আমি জানতে পারি।
অভিযুক্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স রফিকুল ইসলামের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জানতে চাইলে সে প্রথমে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায়। এতে ব্যর্থ হয়ে তাকে দেখে নেয়া হুমকি দেয় রফিকুল।
এসব বিষয়ে শেরেই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেনি। ওই অপকর্মের প্রমান পেলে সরকারি বিধিমোতাবেক তাৎক্ষনিক রফিকুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।