পুলিশের সহায়তায় ১১ মাস পর দুই মেয়েকে ফিরে পেলেন বাবা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা প্রতিনিধি, রোববার, ১৭ এপ্রিল ২০২২ : পুলিশের সহায়তায় দীর্ঘ ১১ মাস পর হারিয়ে যাওয়া দুই মেয়েকে ফিরে পেলেন বাবা। নারায়ণগঞ্জে এমন একটি ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে সদর উপজেলার ফতুল্লা মডেল থানায় দুই কন্যাশিশুকে তাদের বাবার হাতে তুলে দেয় পুলিশ।

স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে সুখেই কাটছিল দিনাজপুর জেলার কাহারোল থানার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী। তবে হঠাৎ করেই সুখের সংসারে নেমে আসে হাহাকার। দালালদের প্রলোভনে পড়ে স্বামীর বাঁধা উপেক্ষা করে দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে পালিয়ে যান ইদ্রিস আলীর স্ত্রী শাহনাজ বেগম (২৭)। পরে শিশু সন্তানদের নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তার মায়ের কাছে রেখে বিদেশে চলে যান শাহনাজ। কিন্তু বিষয়টি অজানা থাকে ইদ্রিস আলীর কাছে। তাই দুই শিশু কন্যাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন তিনি।

 
সেই দিন থেকে স্ত্রী সন্তানদের হারিয়ে তাদের নানা স্থানে খুঁজে বেড়াচ্ছেন ইদ্রিস আলী। দেশের বিভিন্ন স্থানে রিকশা চালিয়ে অলিগলিতে খুঁজেছেন। দীর্ঘ এগারো মাস পর প্রতীক্ষার অবসান ঘটে ইদ্রিস আলীর। শাশুড়ি আকলিমা বেগম তাকে ফোন করে জানান, তোমার স্ত্রী শাহনাজ তোমাদের দুই কন্যাকে আমার কাছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় রেখে গেছে। এ কথা বলে শাশুড়ি ফোন বন্ধ করে দিলে দুই কন্যাকে পাওয়ার আশায় নারায়ণগঞ্জে ছুটে আসেন ইদ্রিস আলী। কিন্তু শাশুড়ির ঠিকানা তার জানা নেই। আশার আলোতে যেন আঁধারের ছায়া নেমে আসে। আবারো রিকশা চালিয়ে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে দুই কন্যাকে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল নাজমুল হাসান জানান, গত ১০ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় এসে ইদ্রিস আলী অভিযোগ করেন, তার পরিবারের তিনজন সদস্য দিনাজপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে গত বছরের মে মাস থেকে নিখোঁজ রয়েছে। তার শাশুড়ি ফোন করে ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকার ঠিকানা দিয়েছেন। এ জন্য তিনি দিনাজপুর থেকে ফতুল্লায় এসে একটি গ্যারেজে থেকে রিকশা চালিয়ে স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। না পেয়ে তিনি থানায় এসেছেন। স্ত্রী সন্তানকে খুঁজে দিতে পুলিশের সহায়তা চান ইদ্রিস আলী।
 
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ইদ্রিস আলীর কাছ থেকে একটি জিডি গ্রহণ করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় একটি ফোন নম্বরের সূত্র ধরে ইদ্রিস আলীর শাশুড়ি আকলিমার অবস্থান শনাক্ত করে থানা পুলিশ। পরে ফতুল্লার মুসলিমনগর এলাকা থেকে তাকে খুঁজে বের করে। এরপর পুলিশ আকলিমার কাছ থেকে জানতে পারে তার মেয়ে শাহনাজ দুই শিশু সন্তান ইতি (৯) ও মীমকে (৫) তার কাছে রেখে বিদেশ চলে গেছেন। তবে কোন দেশে গেছেন তা জানেন না তিনি।
জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, উদ্ধার করা দুই শিশুকে বাবা ইদ্রিস আলীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।

এদিকে দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর হারানো দুই কন্যাকে ফিরে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন ইদ্রিস আলী। অশ্রুসিক্ত নয়নে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

এ সময় ইদ্রিস আলী থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার হারিয়ে যাওয়া দুই মেয়েকে আমি অনেক খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। পুলিশ আমার সন্তানদের খুঁজে বের করে দিয়েছে। এ জন্য আমি অনেক খুশি এবং স্বস্তি বোধ করছি। পুলিশ বাহিনীকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।’