ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২ : ইউক্রেন ইস্যুতে দুই পরাশক্তি রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সংকট প্রকট হয়েছে। এই ইস্যুতে সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। ইউক্রেন প্রশ্নে নিজেদের অবস্থানে অনড় রাশিয়া ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। এ পটভূমিতে দুই পক্ষের পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে। অন্যদিকে চীন এই সম্ভাব্য যুদ্ধের কোনো আঁচ নিজের গায়ে লাগতে দিচ্ছে না।
শান্তির বুলি আওড়ানো চীন এই সংকটে অর্থনীতিতে জোয়ার আনতেই ব্যস্ত। নিজের স্বপ্ন পূরণে বিপদে তার স্বঘোষিত বন্ধুর (রাশিয়া) পক্ষেও মুখ খুলতে দেখা যাচ্ছে না। চীন এখন অন্য দেশের প্রতি সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা, অ-আগ্রাসন এবং অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর দিকেই মন দিচ্ছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সীমাহীন বন্ধুত্বের চুক্তি করেছিলেন। ঐতিহাসিক সেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক চুক্তির এক মাস না যেতেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া বিশ্ব অর্থনীতি থেকে ছিটকে পড়লেও, স্বাভাবিকভাবেই অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে চীন। মানে লাভজনক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
অন্যদিকে, রাশিয়ার জিডিপি বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডের সমবেত অর্থনীতির চেয়ে বড় নয়। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার জন্য যুদ্ধে টিকে থাকা কঠিন এবং যুদ্ধ টিকে থাকতে হলে তার চীনা সামরিক সহায়তার প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু চীন সাহায্য করা তো দূরের কথা কৌশলগতভাবে এই যুদ্ধের বিরোধিতা করে আসছে।
এই সংকটের অবসান ঘটাতে চীন নিজেকে বেশ বড়সড় ভাবেই নিজেকে জাহির করতে পারে। প্রথমত, যুদ্ধ বন্ধে সংলাপ ও আলোচনায় বসতে সবপক্ষকে চাপ দিতে পারে। দ্বিতীয়ত বেসামরিক লোকজন হত্যা থামাতে ও মানবিক সংকট রোধে পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু চীনের হিসাব-নিকাশ ভিন্ন। এ অবস্থাতে দেশটি একেবারই নিরপেক্ষ ও নীরব অবস্থানে রয়েছে। এমনকী রাশিয়ারও কোনো আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে উৎসাহী হচ্ছে না। এই যুদ্ধে চীনের লুকায়িত লাভ রয়েছে তার অর্থনীতিতে। দেশটির রাশিয়া অর্থাৎ পুতিনের পক্ষ নিয়ে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে চায় না।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছিলেন, রাশিয়াকে পশ্চিমারা যেভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেই নিষেধাজ্ঞার কবলে চীন পড়তে চায় না। চীন নীতিগতভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করে এবং বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে চায়। নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চায় না।
গত ৪০ বছরে বিশ্বায়নের ফলে চীনের চেয়ে কোনো দেশ বেশি লাভবান হয়নি। রাশিয়া যখন ভয়ংকর যুদ্ধে বিশ্বকে অতলে নিয়ে যাচ্ছে, তখন চীন তার নেতৃত্ব দেখাতে পারে। ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে গত শুক্রবার (১৯ মার্চ) চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রায় দুই ঘণ্টা ভিডিও কলে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে চীন সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা স্বীকার করেনি চীন। জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদে ভোটদান থেকেও বিরত ছিল দেশটি। এমনকি ইউক্রেনে অভিযানে কোনো নিন্দাও জানায়নি। তাদের অবস্থান বদলের কোনো আলামতও দেখা যাচ্ছে না।