ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ : বিদেশে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হতো তরুণীদের। এরপর বিদেশে বাধ্য করা হতো ডান্স ক্লাবে কাজ করতে। এমনই আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী একটি চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। রোববার রাতে পাচারের আগ মুহূর্তে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ৩ ভিকটিমকে।
কম শিক্ষিত মেয়েদের টার্গেট করত একটি চক্র। বলা হতো, বিদেশে চাকরি দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে গৃহকর্মী ও ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে পাঠালেও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন ডান্স ক্লাবে ও অসামাজিক কাজে বাধ্য করতো এই চক্রের সদস্যরা।
তাদের ফাঁদে পড়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল এক তরুণী। শেষ মুহূর্তে পাচারকারীদের অসৎ উদ্দেশ্য টের পেয়ে যেতে না চাইলে একপর্যায়ে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় চক্রের সদস্যরা।
ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, আমাকে বলে তোমার জন্য ভিসা ও টিকেটের জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। সেগুলো দিতে হবে না হলে যেতে হবে। পরে জোর করে বিমানবন্দরে নিয়ে আসে।
পাচারের উদ্দেশে কয়েকজন নারীকে রোববার রাতে বিমানবন্দরে আসতে বলে চক্রটি। পরে ওই ভুক্তভোগী নারী বিষয়টি র্যাবকে জানালে, পাচারের আগমুহূর্তে চক্রটির তিন সদস্যকে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-১ এর সদস্যরা। এসময় আরও দুইজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে র্যাবের দলটি।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এক ব্রিফিংয়ে পুলিশের এই বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা জানান, এই চক্রের মূল হোতা আজিউল হক। এর আগেও প্রায় ৮০ জন নারীকে বিদেশে ডান্স ক্লাবে পাচার করেছে মানবপাচারের এই চক্রটি।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, বর্তমানে দেশে মানবপাচারের মত অপরাধ থেমে নেই। মানবপাচারকারী চক্রের টার্গেট দরিদ্র মানুষ। পাচারকারীরা বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ-সরল মানুষগুদেরকে ফাঁদে ফেলে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। পাচারকারীদের পাতা জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন এসব মানুষ। যার অধিকাংশই নারী। এসব নারীদের বিদেশে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন পেশায় চাকরির কথা বলা হলেও তাদেরকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে জোরপূর্বক সম্পৃক্ত করা হয় ডিজে পার্টি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, এ পর্যন্ত চক্রটি প্রায় ৮০ জন নারীকে এভাবে বিদেশে পাচার করেছে। পাচারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাইতে পাচার হয়েছেন এবং সৌদি আরব ও ওমানেও কিছু নারী পাচার হয়েছেন। বিদেশে যেতে ইচ্ছুক একাধিক পুরুষের কাছ থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে চক্রটি। বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থানরত চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন ও শিল্পীর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে মানবপাচার হচ্ছিল। মহিউদ্দিনের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া নোয়াখালীর নূর নবী ওরফে রানা (৩৫) ও ঢাকার মনজুর হোসেন (৩৩) এই চক্রের দেশীয় মূলহোতা, যারা এখনো পলাতক রয়েছেন।
৫০-৬০ টি গ্রুপ এ ধরনের তৎপরতা চালিয়ে আসছে বলে তথ্য রয়েছে র্যাবের কাছে। বিদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।