ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ : গত দুই দিনে মুসকানের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি হিজাব পরে তার স্কুটি পার্ক করে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু বেশ কিছু মানুষ তাকে অনুসরণ করছেন।
দেখা যায়, গেরুয়া রঙের স্কার্ফ পরিহিত একদল ব্যক্তি ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগানে ছাত্রীটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর চিৎকার করছে।
ওই ছাত্রীও তখন ভিড়ের দিকে ফিরে দু’হাত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন। ওই ঘটনা আর ভিডিওটি পুরো দেশেই আলোচনার ঝড় তুলেছে।
এ বিষয়ে মুসকান বলেন, আমি আল্লাহু আকবর বলেছিলাম কারণ আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। এবং যখন আমি ভয় পাই, আমি আল্লাহর নাম নেই। আল্লাহর নাম নিলেই আমার সাহস বেড়ে যায়।
মুসকান কর্নাটকের মান্ডা জেলার একটি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের বি.কম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
মুসকান খান
বিবিসির হিন্দি সংস্করণকে দেওয়া এক সাক্ষতকারে তিনি বলেন, আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না। সবসময় যেভাবে কলেজে যাই, সেভাবেই গেলাম। বাইরে থেকে আসা একদল লোক সেখানে বললো যে বোরকা পরে কলেজের ভেতরে যাবে না। কলেজে যেতে হলে বোরকা ও হিজাব খুলে ভেতরে যেতে হবে। তুমি যদি বোরকা পরে থাকতে চাও, তবে বাড়ি ফিরে যাও।
আমি ভিতরে এলাম। ভেবেছিলাম চুপচাপ চলে যাব। কিন্তু সেখানে অনেক শ্লোগান উঠছিল। ‘বোরকা কাদ’, ‘জয় শ্রী রাম’-এর মতো শ্লোগান দেয়া হচ্ছিল।
আমি ভেবেছিলাম আমি ক্লাসে যাব, কিন্তু ছেলেগুলো আমাকে এমনভাবে অনুসরণ করছিলো যেন তারা সবাই আমাকে আক্রমণের চেষ্টা করছে। তারা ছিল ৪০ জনের মতো। আমি ছিলাম একা। কারো মধ্যে আমি মনুষ্যত্ব লক্ষ্য করিনি। হঠাৎ তারা আমার কাছে এসে চিৎকার করতে লাগল। কারো কারো হাতে ছিল কমলা রঙের স্কার্ফ।
আর আমার মুখের সামনে এসে স্কার্ফ দোলাতে দোলাতে বলতে লাগলো – জয় শ্রী রাম, চলে যাও, বোরকা খুলে ফেলো।
হিজাব পড়ার বিষয়ে মুসকান বলেন, প্রি-ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকে আমি হিজাব পরে আসছি। কলেজে কোনো সমস্যা হয়নি। সবকিছু আগের মতই ছিল। আমরা হিজাব পড়ে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। আমরা বোরকা পরি না। শুধু হিজাব পরি। চুল আড়াল করে ক্লাসে যাই।
কিন্তু ওই লোকেরা আমাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেও দিচ্ছিল না। তারা অনেক বহিরাগত ছিল এবং কলেজের ছাত্র ছিল কম। বেশিরভাগই ছিল বহিরাগত। আমার সামনে চারজন মেয়ে এসেছিল। গেট তালাবদ্ধ ছিল। তারপর কোনোমতে প্রিন্সিপাল এলেন। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা আমাকে রক্ষা করেন। ছেলেরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভেতরে গিয়েছিল। কিন্তু বেরিয়ে এসে একই কাজ করলো। আমি কাঁদিনি। আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।
এই ছাত্রী আরও বলেন, আমাদের প্রিন্সিপ্যাল নিজেই বলেছিলেন হিজাব পড়ে আসতে। এই বাইরের লোকগুলো এসে এমন চমক তৈরি করছে। তিনি নিজেই বললেন, আগে যেভাবে আসতে, এসো। কোন সমস্যা নেই।
মুসকান বলেন, ভারতের সংবিধানে আমার বিশ্বাস আছে। এমনভাবে করে সংবিধানের বিপক্ষে যাবো না। ইনশাআল্লাহ, আমরা হাইকোর্টের আদেশের অপেক্ষায় আছি। আমি এখানে হিন্দু বা মুসলিম কোন জাতপাত ছড়াচ্ছি না। আমি শুধু আমার শিক্ষার জন্য, আমার অধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছি। আমরা হিজাব পরছি বলে আমাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা বছরের পর বছর ধরে এটি পরছি। এটি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই লোকগুলো এমনভাবে বলছে যে তুমি যদি এটা পরে আসো, তাহলে আমরা (গেরুয়া) পরে আসবো।
ছেলেরা আমার কলেজের প্রিন্সিপ্যালকে বলছে, সে যদি বোরকা পরে আসে, তাহলে আমরাও এসব সরাবো না (গেরুয়া, গামছা-পাতা ইত্যাদি)। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তারা যেকোসো ভাবে আসতে পারে। আমাদের শুধু হিজাব পরার অনুমতি দরকার। যেভাবেই তারা আসুক না কেন, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।
আমাদের শুধু দরকার শিক্ষা। আমাদের অধ্যক্ষ আমাদের সঙ্গে আছেন, শিক্ষকরা আমাদের সাথে আছেন। বাইরে থেকে এসে কিছু লোক কেবল নজর কাড়ার চেষ্টা করছে। আর সংবিধানের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। হাইকোর্ট থেকে নেতিবাচক কিছুই আসবে না।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
