ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কুমিল্লা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২২ : কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) প্যানেল মেয়র ও নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল হত্যার দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে।
প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত ও দেশব্যাপী আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা জড়িত, কে মূল পরিকল্পনাকারী এসব প্রশ্নের জবাব আজও পায়নি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবার।
এদিকে, নিহতদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও হতাহতদের শরীরে লাগা গুলির ব্যালেস্টিক রিপোর্ট এখনও হাতে পায়নি তদন্তকারী সংস্থা। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, মামলাটির তদন্তে অনেক অগ্রগতি আছে এবং এ ঘটনার নেপথ্যে কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। নিহত কাউন্সিলরের পরিবার ও মামলার তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মামলার বাদী নিহত কাউন্সিলরের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ভাই এলাকায় অত্যধিক জনপ্রিয় ছিলেন। এলাকার মানুষের সুঃখ-দুঃখে পাশে ছিলেন। তিনি সামাজিক অনাচার ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন। আমার ভাই ও তার সহযোগীকে হত্যার দুই মাস হতে চলেছে। আমরা ঘটনার শুরু থেকেই বলেছি, এখনও বলছি, এই জোড়া খুনের পেছনে প্রভাবশালী কোনো মহলের হাত রয়েছে। কারণ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত মামলার প্রধান আসামি শাহ আলমসহ গ্রেফতার অনেকে টোকাই শ্রেণির সন্ত্রাসী। কিলিং মিশনে ব্যবহৃত এসব অস্ত্র কেনার টাকা তারা কোথায় পেল? এসব থেকেই বোঝা যায় তাদের পেছনে অর্থ ও ইন্ধনদাতা অন্য কেউ রয়েছে। তদন্ত সংস্থা চাইলেই খুনের নেপথ্যের সবকিছু সামনে আনতে পারে।’
কাউন্সিলর সোহেলের একমাত্র ছেলে হাফেজ সৈয়দ মো. নাদিম বলেন, ‘তার বাবাকে খুনের মূল পরিকল্পকারীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে, এজন্য আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমরা এখনও তাদের নাম জানতে পারিনি। অনেকবার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছি। আমরা বলেছি, নেপথ্যে প্রভাবশালী কেউ আছে, তাদের নাম প্রকাশ করুন। কিন্তু এখনও তারা কারও নাম বলছেন না। আমাদের মনে হচ্ছে, পর্দার আড়াল থেকে পরিকল্পনাকারীদের সামনে আনার সম্ভাবনা দিন দিন কমে আসছে।’
জেলা ডিবি সূত্র থেকে জানা গেছে, সহযোগীসহ কাউন্সিলর খুনের ঘটনার পর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন এ মামলার এজাহারনামীয় ৩ জন আসামি। তারা হলেন- ১ নম্বর আসামি শাহ আলম, ৩ নম্বর আসামি সাব্বির সোহেল ও ৫ নম্বর আসামি মো. সাজন। এছাড়া এ পর্যন্ত পুলিশ, ডিবি ও র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ১২ জন। এদের মধ্যে এজাহারনামীয় ৭ জন ও সন্দেহভাজন ৫ জন। পলাতক আছেন মামলার ১১ নম্বর আসামি রনি। এখন পর্যন্ত জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া মোট ৭ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মো. মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, ‘নিহতদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনও হাতে আসেনি। এ ছাড়া কিলিং মিশনে ব্যবহৃত উদ্ধার হওয়া অস্ত্র এবং হতাহতদের শরীরে লাগা গুলির ব্যালেস্টিক রিপোর্টও পাইনি। অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মামলাটির তদন্ত চলছে, তদন্তের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। হত্যাকান্ডের পেছনে প্রভাবশালী কেউ থেকে থাকলে অবশ্যই তাদের নাম তদন্তে উঠে আসবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না। মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে, তখন সবকিছু জানা যাবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ নভেম্বর বিকাল ৪টার দিকে নগরীর পাথুরিয়াপাড়া এলাকায় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেলের থ্রি-স্টার এন্টারপ্রাইজে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে কালো মুখোশ ও হেলমেটপরা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন কাউন্সিলর সোহেল এবং তার সহযোগী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাহাপাড়া এলাকার হরিপদ সাহা। পরদিন রাতে কাউন্সিলরের ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
https://youtu.be/4FuBLIbcFbY