ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),পাবনা প্রতিনিধি,সোমবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২২ : পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনের ওয়েটিং রুম বেয়ারার পদে জরিনা খাতুনের নিয়োগ হলেও চার বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন রেলের পরিচালক শফিকুর রহমানের ঢাকার বাসায়। সরকারি কোষাগার থেকে প্রতিমাসে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতন বাবদ খরচ হলেও তার ফল পাচ্ছে না রেলওয়ে। দুদক ও রেল মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।
রেলে অনুমোদিত জলবল ৩৭ হাজার ৬০১ জন। পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে কাজ করছেন ২৩ হাজার ২৪৪ জন। পদ খালি আছে ১৪ হাজার ৩৫৭ জনের।
রেলে যখন জনবলের এমন ভয়াবহ সংকট, তখন পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশনের ওয়েটিং রুম বেয়ারা জরিনা খাতুনকে নিজবাসায় গৃহকর্মীর কাজ করাচ্ছেন রেলের পরিচালক শফিকুর রহমান। যিনি আরটিভির কাছে নিজেকে রেলের একজন সৎ ও যোগ্য অফিসার দাবি করছিলেন। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, অফলাইনে কথা বলতে। এরপর চেয়ার ছেড়ে উঠে যান।
চার বছর ধরে চলা এমন তুঘলকি কাণ্ডের অনুসন্ধানে পরিচালক সফিকের ঢাকার শাজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনির বাসায় আরটিভি টিম। কিন্তু ততক্ষণে দরজায় তালা ঝুলিয়ে পুরো পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন তিনি। ফোন করলে ক্ষিপ্ত হন শফিক সাহেব।
ঢাকার বাসায় জরিনাকে না পেয়ে জরিনার কর্মস্থল পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে আরটিভি। স্টেশনের তত্ত্বাবধায়ক মহিউল ইসলাম স্বীকার করেন, পরিচালক শফিকের বাসায় কাজ করেন জরিনা। দেখালেন হাজিরা খাতাও। যেখানে বছরের পর বছর সই করছেন অন্যরা।
ঈশ্বরদী রেল জংশনের তত্ত্বাবধায়ক মহিউল ইসলাম বলেন, আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্তমানে তিনি গত ১ তারিখ থেকে ছুটিতে আছেন। যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা আমি এখনও নিতে পারিনি।
এবার জরিনার খোঁজে পাবনার গ্রামের বাড়িতে আরটিভি। জরিনার ছেলে জানান তিনি অসুস্থ। তবে কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, তা জানা নেই ছেলের।
জরিনার ছেলে মনি হোসেন বলেন, অনেকদিন ধরে অসুস্থ। এ জন্য চাকরিতে যেতে পারছে না। সে বর্তমানে সিক লিভে (অসুস্থতাজনিত ছুটি) আছে।
জরিনাকে প্রতিবেশী ও সহকর্মীরা জানান, কয়েক বছর ধরে কর্মস্থল ও নিজবাড়িতে দেখেননি তাকে।
বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, এটা তদন্ত করে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্মচারীদের যে আইন ডিসিপ্লিন অ্যান্ড আপিল রুলস, ১৯৮৫ এখানেও এর প্রতিকার আছে। এর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। কারণ, এটা এক ধরনের দুর্নীতি।
এমন আরও কত জরিনা খাতুন কত পরিচালকের বাসার গৃহকর্মী হয়ে আছে বা কর্মস্থলে নেই, তা আজ ও আগামীতে খুঁজে বের করবে আরটিভি। আর তা তুলে ধরবে দর্শকের সামনে।