ইসির ভুলে ডিজিটালি ‘মৃত’ ১৪ হাজার মানুষ (ভিডিও)

SHARE
ইসির ভুলে ডিজিটালি ‘মৃত’ ১৪ হাজার মানুষ (ভিডিও)

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২২ : জীবিত থেকেও নির্বাচন কমিশনের ভুলে এনআইডি সার্ভারে মৃত ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। চ্যানেল 24 এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। তাদের জীবিত করতে সারাদেশে রোলব্যাক সিস্টেম চালু করা হলেও সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

সবুজ মাঠে সোনালি ফসল ফলিয়ে যারা বাঁচিয়ে রেখেছেন দেশের মানুষ আর কৃষি অর্থনীতিকে বরগুনার আমতলীর আব্দুর রাজ্জাক তাদেরই একজন। তবে আব্দুর রাজ্জাকের মুখে হাসি নেই। কেননা ক’দিন আগে কৃষি ঋণ নিতে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মৃত। তাই ভোটাধিকারসহ বঞ্চিত হচ্ছেন সব ধরণের নাগরিক সেবা থেকে।

ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি জীবিত মানুষটাকে মেরে ফেলেছে। আমি যেখানেই যাই সেখানেই কোনও সুযোগ-সুবিধা পাই না। সব জায়গাতেই আমি মৃত।

আব্দুর রাজ্জাকের জানেনও না কিভাবে কারা তাকে মেরে ফেলেছে। আমতলী উপজেলা নির্বাচন অফিসের নথিপত্র কিংবা এআইডি সার্ভার কোথাও কোন ধরণের তথ্য খুঁজে পাই নি চ্যানেল 24-ও। তাহলে কিভাবে মৃত ঘোষণা করা হলো?

অনুসন্ধান চলাকালে গত জুনে চ্যানেল 24-এর হাতে আসে নির্বাচন কমিশনের একটি গোপন চিঠি। যে চিঠিতে এমন ৯,৪৭ জন মানুষকে জীবিত করার নির্দেশ দেয় কমিশন। তবে তাদের কেন মারা হলো কিংবা এর জন্য কারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় উদ্বেগ জানায় ইসি।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর বলেন, প্রতিবারই আমি একথা বলে দিচ্ছি যে, আপনাদের হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আপনারা যত তাড়াতাড়ি পারেন বিষয়টি মিমাংসা করেন। যদি এমন কোনও ঘটনা আমার নজরে আসে আমি সে বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।

টানা এক বছর অনুসন্ধানে এমন ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষের তালিকা সংগ্রহ করে চ্যানেল 24। এতো বিশাল সংখ্যক জীবিত মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় টনক নড়ে ইসির। থানা পর্যায়ে মৃত ভোটারদের জীবিত করতে ‘রোলব্যাক’ এর নির্দেশ দেয়া হয়।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর বলেন, যেহেতু রেজিস্ট্রেশন করে রেজিস্ট্রেশন অফিসার, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সেহেতু রেজিস্ট্রেশনে যদি কোন ভুলত্রুটি হয় প্রাথমিকভাবে যদি আমরা টেকনিক্যালি সেটা বুঝতে পারি সেক্ষেত্রে তিনি এটাকে রোলব্যাক করতে পারেন।

কিন্তু সেই নির্দেশনাও বা কতটুকু মানা হচ্ছে? ফিরতে চাই বরগুনার আমতলী উপজেলায়। প্রায় অর্ধশত জীবিত মানুষের সার্ভারে মত্যু হয়েছে এই নির্বাচন অফিস থেকে। তাদেরই একজন ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক।

প্রায় এক বছর আগেই আব্দুর রাজ্জাক নিজের মৃত্যুর খবর শুনে উপজেলা অফিসে বেঁচে ফেরার আবেদন করেন। বার বার ধর্না দিয়েও কোন লাভ হয় নি। এবার চ্যানেল 24 তাকে নিয়ে যায় নির্বাচন অফিসে। এ দফায় চেষ্টায় সফল হন ষাটোর্ধ্ব রাজ্জাক।

ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন আমার ভালো লাগছে। যেহেতু আমার আর কোন অসুবিধা হবে না। আইডি কার্ড ঠিকঠাক।

এই আব্দুর রাজ্জাকের মতোই সদর উপজেলার তসলিম, মোস্তফা কামাল, আশরাফ, নীলমনি দাসদের গল্পগুলো এমন।

অনুসন্ধান বলছে, প্রতি বছর হালনাগাদে একেকটি মৃত ভোটার কর্তনদের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী স্কুল শিক্ষকরা পান ১০ থেকে ১৫ টাকা। এসময় অনেকে বাড়তি লাভের আশায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। সাবেক এই কমিশনার বলছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে ইসিকে।

তিনি বলছেন, এনআইডির মতো স্পর্শকাতর সার্ভার থেকে এমন সব ঘটনার নেপথ্যে যারা আছেন তাদের বিচার না হলে এই সংকট রয়েই যাবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকেই নিশ্চিত করার কথা। এখন নির্বাচন কমিশন সেই নিশ্চিত করার জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো নেয়ার কথা সেটা হয়তো তারা নেয়নি। অথবা আমার যেটা মনে হয় তারা কোন নিরাপত্তা আইনই করতে পারেনি। যে জন্য তারা কাউকে চিহ্নিত করতে পারছে না। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি কমিশনকে সিরিয়াসলি নিতে হবে এবং এর সঙ্গে যে সকল নির্বাচনি কর্মকর্তা অথবা যারাই জড়িত থাকে তাদের বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।