ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ : যুদ্ধে যার জন্ম অর্জনের দিক দিয়ে ৫০ বছরে সেই বাংলাদেশ এখন গোটা বিশ্বের বিস্ময়। মানবসম্পদ উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার সাফল্য নজিরহীন। কেবল তাই নয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বেশিরভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ৯ মাস ধ্বংসযজ্ঞের পর মাইনাস ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ জিডিপি ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের পথচলা শুরু হয়। তবে পরের বছরই ১৯৭৩ সালে ঘুরে দাঁড়ায় প্রবৃদ্ধির চাকা। হয়, ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। করোনার মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতি যেখানে নেগেটিভ সেখানেও গেল অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ঘোষণা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট। যার অঙ্ক ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। আর স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে সেই বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭৬৮ গুণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪১ হাজার ২৯ কোটি টাকা। রপ্তানি আয় ২২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া ১৯৭২ সালে বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১১ হাজার টাকা। প্রায় ২০ গুণ বেড়ে যা এখন ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। দারিদ্র্যসীমা ৮৮ শতাংশ থেকে নেমেছে, প্রায় ২০ শতাংশে। আর গড় আয়ু ৫৩ বছর থেকে উঠেছে ৭২ দশমিক ৮ বছরে।
স্বাধীনতার পর ৭ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সাহায্য নিতে হয়েছিল বিদেশিদের কাছে। আর এখন ১৭ কোটি মানুষের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। প্রায় সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচ দেশে নির্মাণ হচ্ছে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্প। মহাকাশে গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলছেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের এই জাতির মনে একটা লড়াকু মন দিয়ে গিয়েছিলেন, সেটাই বাংলাদেশকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছে।
পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, শ্রমিক, দিনমজুর ও উদ্যোক্তারা নিজেদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। সরকারিভাবে সেই সুযোগটা করে দেওয়া হয়েছে বলেই আমরা অগ্রগতি করতে সক্ষম হয়েছি।
অর্থনীতিবিদ ড. ফরাস উদ্দিন জানান, শ্রমজীবী ও বিত্তবানদের এক কাতারে নিয়ে আসতে হবে। যাতে তারাও উৎপাদনে সহযোগিতা করতে পারে। তাহলেই আর দারিদ্র থাকবে না, বৈষম্য কমে যাবে এবং অগ্রগতিটা টেকসই হবে।
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এখন বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদদের বিশ্বাস, উন্নয়নের এ ধারা বজায় থাকলে, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় ঠিকই নাম লেখাবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।