ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে চিত্রনায়িকা মাহির ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় চিত্রনায়ক ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বিষয়টি সময় সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান এবং নায়িকা মাহির ফোনালাপের সঙ্গে অভিনেতা ইমনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী যখন ফোন করেন তখন ফোন রিসিভ করেন ইমন। তারপর প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ইমন ও মাহির কথোপকথন হয়। এ কথোপকথন ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। মাহি এ মুহূর্তে ওমরার জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। তাই প্রাথমিকভাবে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে ইমনকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকেছিলাম। উনি ফোনালাপের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। প্রায় আধা ঘণ্টা তার সঙ্গে ডিবি কর্মকর্তাদের কথা হয়। প্রাথমিকভাবে তার কোনো ইল মোটিভ (খারাপ উদ্দেশ্য) পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ডিবি কার্যালয়ে ত্যাগ করেন।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, মাহিয়া মাহি দেশে ফিরলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ফোনালাপ। এতে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে আপত্তিকর ভাষায় বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। মাহিকে তুলে এনে ধর্ষণের হুমকিও দেন তিনি!
ভাইরাল সেই ফোনালাপ নিয়ে সোমবার মুখ খোলেন চিত্রনায়ক ইমন। অডিওটি সঠিক বলে সময় নিউজকে ভার্চুয়াল কলে নিশ্চিত করেন তিনি। ইমন বলেন, যা শুনেছেন তাই। এটি আসলে বছরখানেক আগের ঘটনা। একটি সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানের আগের রাতে প্রতিমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। বাকিটা তো আপনারা শুনেছেনই।
কোন সিনেমার মহরত? উত্তরে ইমন বলেন, আমরা তখন ‘ব্লাড’ সিনেমার প্রস্তুতিতে ছিলাম। বনানীতে পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন ভাই ছিলেন। তখনই উনি (ডা. মুরাদ) ফোন করেছেন। আমি আসলে প্রতিমন্ত্রীকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমি কিন্তু বলেছি, ‘হ্যাঁ, ভাই আসছি। দেখছি ভাই।
এ ঘটনায় ইমনের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক ইমন বলেন, আমি মাহিকে নিয়ে গেছি এমন কোনো কথা কিন্তু নাই। মাহির সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর কী কথা হয়েছে সেটা আমি তখনও জানতাম না। আজকে শুনলাম। মন্ত্রী চাওয়ার পর আমি মাহিকে ফোন দিয়ে সুমন ভাইয়ের সাথে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কথা বলা শুরু করি। আমি শুধু উনাকে (প্রতিমন্ত্রী) সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
বনানীতে মিটিং শেষ করে যার যার মতো করে বাসায় চলে গেছেন বলে জানান ইমন। তার ভাষায়, একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী যেকোনো শিল্পীকে ফোন দিতেই পারেন। তবে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য না। বিষয়টি মাহি এবং আমার জন্য বিব্রতকর।
এদিকে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি ফেসবুক লাইভে এসে ভাইরাল সেই অডিও ক্লিপ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, সেদিন ঘটনা ঘটার পর আমি বেশ বিব্রত ছিলাম। নিজের আত্মসম্মানে কতটুকু আঘাত লেগেছে সেটি আমি আর আমার আল্লাহ জানেন। এবং আজকেও আমি ভীষণ লজ্জিত নিজের কাছেও সেই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে।
আপনারা নিজে থেক একবার চিন্তা করে দেখবেন আসলে এ ভাষার প্রতিউত্তর আমি কী দিতাম সেই সময়? বলার ভাষা আমার সেদিন ছিল না। আমি নিজের মতো করে উত্তর দিয়ে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। এটা ঠিক দুই বছর আগের ঘটনা ছিল।
আমি বরাবরের মতো সেদিনও বলেছিলাম, আল্লাহ আমি কষ্ট পেয়েছি। যার মাধ্যমে কষ্ট পেয়েছি কোনো না কোনোভাবে তিনি তার ফল পেয়েছেন। এটা আমার কাছে প্রমাণিত।
মাহি বলেন, আমি সাংবাদিক ভাইদের কাছে স্যরি বলছি। কারণ ফোন রিসিভ করতে পারিনি। আমি ওমরাহ করতে এসেছি। আসলে এ অবস্থায় ফোন সিরিভ করার মতো অবস্থায় ছিলাম না। আপনারা চিন্তা করে দেখবেন আমার জায়গায় থেকে আসলে আমি দোষী নাকি নির্দোষ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমাদের ওমরাহ কবুল করেন।
গেল ২৪ নভেম্বর নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ওমরাহ পালনে যাওয়ার বিষয়টি জানান মাহিয়া মাহি। পোস্টে মাহি লিখেছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ, জীবনে প্রথমবার ওমরাহতে যাচ্ছি। এ অনুভূতি প্রকাশের ঊর্ধ্বে। তোমার জন্য অন্তর থেকে অনেক অনেক দোয়া। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।