ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আবহাওয়া প্রতিনিধি,রোববার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ : বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় গুলাব রোববার মধ্যরাত নাগাদ ভারতীয় উপকূল অতিক্রম করবে।
হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়টির তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। তবে ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ভারতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার এরই মধ্যে নানা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে খবরে জানা যাচ্ছে।
ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার, মোংলা থেকে ৫২৫, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩০ এবং চট্টগ্রাম থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, রোববার রাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড় গুলাব আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৯৫ কিলোমিটার।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর ওডিশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশে অতি ভারি বর্ষণের আশঙ্কার রেড ওয়ার্নিং বা লাল হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ছত্তিশগড়ে সোমবার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে সেসময় ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি কমে সেটি নিম্নচাপে পরিণত হবে।
ভারতের এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় গুলাব মোকাবিলায় ওডিশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
উদ্ধারকর্মীদের দল এই দুই রাজ্যের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাবে। ওই কর্মকর্তা জানান, জাতীয় দুর্যোগ তৎপরতা বাহিনীর আলাদা ৫টি দলকে ওডিশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে মোতায়েন করা হয়েছে।
ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে মাছ ধরতে না যেতে স্থানীয় জেলেদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে বঙ্গোপসাগরে সর্বশেষ যে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হয়েছিল, সেটির নাম ইয়াস। গত মে মাসে এটি ভারতের ওডিশায় আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল।
পাকিস্তান এ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে। এর অর্থ গোলাপ জাতীয় ফুল বিশেষ।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার কোনো আশঙ্কা নেই। এটি ভারতের উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গেও ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ইয়াস।
২০০৪ সালের আগে ঘূর্ণিঝড়কে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হওয়ায় ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেওয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো। এ কারণেই বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়।
সাগরভেদে সৃষ্ট হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে রিজিওনাল স্পেশালাইজড মেটেওরোলজিক্যাল সেন্টার (আরএসএমসি) এবং ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ওয়ার্নিং সেন্টার (টিসিডব্লিউসি)। ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশ, বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে সৃষ্ট ঝড়গুলোর নামকরণে আদর্শ পদ্ধতি অবলম্বন করে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত আরএসএমসি।
ক্রান্তীয় ঝড়ের বিষয়ে গঠিত ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন/ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক প্যানেলের আটটি সদস্য দেশ ২০০৪ সালে ৬৪ নাম প্রস্তাব করে। সেখান থেকে নামকরণ শুরু হয়।
২০১৮ সালে ৪৫তম সেশনে আরও পাঁচটি দেশ যুক্ত হয়। বর্তমানে প্যানেলে ১৩টি দেশ রয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। গত বছর আম্ফানের মধ্য দিয়ে আগের প্রস্তাবিত নামগুলো শেষ হয়। সদস্য দেশগুলো নতুন করে আরও কতগুলো নামের তালিকা জমা দিয়েছে। সেখান থেকেই গুলাব নামটি নেওয়া হয়েছে।
পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম হচ্ছে- শাহীন (কাতার), জাওয়াদ (সৌদি আরব), আসানি (শ্রীলঙ্কা), সিতরাং (থাইল্যান্ড) ইত্যাদি।
ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন। অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় টাইফুন।