ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন রাগীব

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ : এমএলএম কোম্পানির ফাঁদ তৈরি করে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান। এ কাজে তিনি সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাতেন।

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ‌্য জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানী শাহাবাগ থানাধীন তোপখানা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাগীব ও তার ভাইকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভাউচার বই ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

রাগীব আহসান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। রাগীব আহসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা আছে।

১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ন শুরু করেন রাগীব আহসান। তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০০ পর্যন্ত খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে মুফতি পড়েন। পরে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় চাকরি শুরু করেন রাগীব আহসান। ২০০৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ইমামতির পাশাপাশি ‘এহসান এস মাল্টিপারপাস’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি করতেন। এ প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে এমএলএম কোম্পানির আদ‌্যোপান্ত রপ্ত করেন। ২০০৮ সালে ‘এহসান রিয়েল এস্টেট’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন রাগীব আহসান।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, রাগীব আহসান মূলত সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার করে এমএলএম কোম্পানির ফাঁদ তৈরি করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ মানুষ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন তিনি। ‘শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ’ এর বিষয়টি ব্যাপক প্রচারণা করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন রাগীব। এছাড়া, তিনি ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের নামে ব্যবসায়িক প্রচার চালাতেন। লাখ টাকার বিনিয়োগে মাসিক মাত্রাতিরিক্ত টাকা প্রাপ্তির প্রলোভন দেখান রাগীব। ২০০৮ সালে ১০ হাজার গ্রাহক সংগ্রহ করেন। এখন তার প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক লক্ষাধিক।

রাগীব আহসানের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০০ কর্মচারী আছে। তাদের বেতন দেওয়া হয় না। কর্মচারীরা মাঠ পর্যায়ে বিনিয়োগকারী গ্রাহক সংগ্রহ করে থাকেন। তাদের গ্রাহকের বিনিয়োগের ২০ শতাংশ অর্থ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়েছে। রাগীব তার কর্মচারীদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে শ্বশুর প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি, বাবা উপদেষ্টা ও ভগ্নিপতি ম্যানেজার। রাগীব আহসানের তিন ভাইয়ের মধ্যে আবুল বাশার প্রতিষ্ঠানের সহ-পরিচালক, বাকি দুই ভাই সদস্য।

রাগীব আহসান গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ আবাসন ব‌্যবসা, দোকান, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে আত্মসাৎ করেছেন। তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহের কথা স্বীকার করেছেন।

রাগীব আহসান বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। এক্ষেত্রে তিনি চেক জালিয়াতি করতেন। অনেকেই চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।

১৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণা করতেন রাগীব। সেগুলো হলো—এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমেটেড, নূর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদরাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার, এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।

এসব প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নামে সম্পত্তি গড়েছেন রাগীব আহসান।