ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি,মঙ্গলবার,৩১ আগস্ট ২০২১ : ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সোনালী দিনের জনপ্রিয় নায়িকা রোজিনা। ক্যারিয়ারে বহু সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। তার স্মৃতিতে এফডিসি’র সেই সোনালি সময়গুলো এখনো অম্লান। ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)র সঙ্গে আলাপকালে সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী।
রোজিনা জানান, ‘প্রথম সিনেমায় পারিশ্রমিক হিসেবে ১০ টাকা পেয়েছিলাম। ছয়-সাতটি সিনেমা হিট হওয়ার পরও আমি গাড়ি কিনতে পারিনি। স্কুটারে করে এফডিসিতে যেতাম। টাকার প্রতি কখনোই আমার লোভ ছিলো না। বাইরের জগতের সঙ্গে মিশে অন্যায়ভাবে টাকা কামানোর চিন্তাও করিনি।
অভিনয়কে ভালোবেসেই চলচ্চিত্রে এসেছি। অভিনয় করাকেই উপার্জনের পথ হিসেবে নিয়েছি। এটা তো আমার কাজ। যত সিনেমায় অভিনয় করব ততো পয়সা পাব। কম হোক আর বেশি হোক। সেখানে যদি কাজের পেছনে না ছুটি, এসেই দু-একটা ছবি করে বাইরের জগতে মিশে কালো টাকা ইনকাম করে ধনী হওয়া, বিলাসবহুল জীবন-যাপন করার চিন্তা করি তাহলে সেটা তো একটা শিল্পকে ধ্বংস করা, শিল্পকে অপমান করা হবে। আমি মনে করি, এটা কোনো শিল্পীর কাজ নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে সব সময় মনে রাখতে হবে- আমি মুসলমান, আমাকে আল্লাহকে ভয় করতে হবে, আমাকে জবাবদিহি করতে হবে, আমাকে নামাজ পড়তে হবে। আর অবশ্যই সেটা করেছি আমরা। অভিনয় করাটা আমাদের কাজ। যতটুকু সম্ভব শালীনতার মধ্যে থেকে কাজ করেছি।
আমরা তো ব্যক্তিগত জীবনের কথা ভাবারই সুযোগ পাইনি। বিশেষ করে আমি আমার কথাই বলব, প্রতিদিন ৩-৪টা শুটিংয়ে কাজ করেছি। ওই সময় ব্যক্তিগত জীবনের আনন্দ নিয়ে ভাবিও নাই। কল্পনায় শুধু ছিল কীভাবে ভালো অভিনয় করা যায়, কীভাবে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া যায়, কীভাবে অ্যাওয়ার্ড পাওয়া যায়। পার্সোনাল লাইফ বলতে কিছু ছিল না আমাদের।’
১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ চলচ্চিত্রের সহ-নায়িকা হিসেবে বড় পর্দায় নাম লেখান রোজিনা। ‘রাজমহল’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে তার যাত্রা শুরু। সেই সিনেমার জনপ্রিয়তায় একের পর এক কাজের ডাক পান তিনি।
৪৩ বছরের ক্যারিয়ারে রোজিনা অভিনয় করেছেন প্রায় দুই শতাধিক সিনেমায়। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘সাহেব’, ‘তাসের ঘর’, ‘হিসাব চাই’, ‘বন্ধু আমার’, ‘কসাই’, ‘জীবনধারা’, ‘মানসী’, ‘দোলনা’, ‘দিনকাল’, ‘রসের বাইদানী’, ‘জীবনধারা’, ‘রূপবান’, ‘হামসে হ্যায় জামানা’।
আমজাদ হোসেনের ‘কসাই’ ও মতিন রহমানের ‘জীবন ধারা’ সিনেমায় অভিনয় করে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন রোজিনা। পাকিস্তানে ‘হাম তো হায় জামানা’ সিনেমায় অভিনয় করে ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের ‘নিগার অ্যাওয়ার্ড’ও লাভ করেন তিনি। এছাড়াও বাচসাসসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন এই অভিনেত্রী।
১৯৯৪ সালে অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ান রোজিনা। পরের বছর পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। দীর্ঘ বিরতির পর ‘রাক্ষুসী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সম্প্রতি নির্মাণেও হাত দিয়েছেন এই চিত্রতারকা। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১৪ বছর পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান রোজিনা। চলতি অর্থ বছরে রোজিনা নির্মিতব্য ‘ফিরে দেখা’ সিনেমাটি সরকারি অনুদান পেয়েছে। এতে বীরাঙ্গনা চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি।