ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক ডেস্ক,শনিবার, ২৮ আগস্ট ২০২১ : ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ছেলে আবদুল্লাহ আল রাব্বিকে বছর তিনেক আগে ইরাকে পাঠান মাছ বিক্রেতা বাবা। সেখানে করোনায় কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তাকে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে জিম্মি করে একটি চক্র। হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে দাবি করা হয় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ। ৫ লাখ টাকা দিয়েও মুক্তি মেলেনি রাব্বির। ইরাক এবং বাংলাদেশে থাকা পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেশে থাকা চক্রের দুজনকে। রাব্বিকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাব্বিকে জিম্মি করার পর চক্রটি ভিডিও কলে কথা বলে রাব্বির বাবার সঙ্গে। দেখানো হয় তাদের হাতে জিম্মি থাকা রাব্বিকে। ভিডিওতে দেখা যায়, মানসিক বিকারগ্রস্তদের মতো হাত-পা শেকলবন্দি রাব্বির। ওই অবস্থায় ইরাকের কুর্দিস্তানের বন্দিশিবিরে জিম্মিদশায় কাটছে বাংলাদেশি তার দিনকাল। অপেক্ষার প্রহর, কবে মিলবে মুক্তি!
রাব্বির পরিবার সূত্রে জানা যায়, সংসারের অভাব ঘুচাতে বছর তিনেক আগে ইরাকে পাড়ি জমান রাব্বি। কুর্দিস্তানের একটি রেস্টুরেন্টে কাজও জুটে যায়। করোনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেলে পড়ে বেকায়দায়। এই সুযোগকে পুঁজি করে একটি চক্র তাকে আশা দেখায় ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার।
ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখে রাব্বিকে। মুঠোফোনে মাছ বিক্রেতা বাবাকে জানায়, তাকে জিম্মি করা হয়েছে। মুক্তিপণ বাবদ ১০ লাখ টাকা না দিলে তাকে হত্যা করে পুড়িয়ে দেওয়া হবে লাশ। ভিডিও কলে দেখানো হয় রাব্বির ওপর অমানবিক নির্যাতনের দৃশ্য।
রাব্বির বাবা সময় সংবাদকে বলেন, ভিডিও কলে রাব্বি আমাকে বলে যদি ১০ লাখ টাকা দাও তাহলে ওরা আমাকে ইউরোপে পাঠাবে, নাহলে আমাকে মেরে ফেলে লাশ পুড়িয়ে দেবে।
ছেলের জীবন বাঁচাতে ধার করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবিকারীদের অ্যাকাউন্টে পাঠায় বাবা। তারপর থেকেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় চক্রটি। যোগোযোগ নেই রাব্বির সঙ্গেও।
এ অবস্থায় দিশেহারা পরিবারটি সহযোগিতা চায় পুলিশের। তদন্তে নেমে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পায় পুলিশ। ফুটেজ দেখে চক্রের এক নারী সদস্যকে শনাক্ত করা হয়। মুক্তিপণ হিসেবে যে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিল সেই টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে দেখা যায় ওই নারীকে।
ঢাকা থেকে শাহনাজ বেগম নামে ওই নারী এবং ফরিদপুর থেকে চক্রের আরেক সদস্য রনি মুন্সীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, তাদের (চক্র) আমরা শনাক্ত করেছি। তাদের সম্পর্কে অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি। জিম্মি রাব্বিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে আবেদন করেছি।
পুলিশ জানায়, ইরাকে অবস্থানরত এই চক্রের চার সদস্য ফরিদপুরের জহুরুল ইসলাম, হাবিব ফকির ও জিয়াউর রহমান এবং সুনামগঞ্জের ছাতক থানার শিহাব উদ্দিন। বাংলাদেশে চক্রটির অপর দুই সদস্য আতিয়া সুলতানা নিপা ও মুরাদ ফকিরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।