ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,বুধবার, ১৮ আগস্ট ২০২১ : আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদই বেশির ভাগ কথা বলেছেন। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। ইসলামিক আইনের ভিতর থেকে নারীর অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন এই তালেবান নেতা।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনের সময় সাংবাদিকেরা ভিন্ন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করে দেখছিলেন। কারণ এই প্রথমবারের মতো তারা জবিহুল্লাহ মুজাহিদের চেহার দেখতে পেয়েছেন। রহস্যময় এই নেতা বহু বছর ধরে ছায়ার ভিতরে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
বিবিসির ইয়াদা হাকিম বলেন, গত এক দশকের বেশি সময় কথা বলছেন, এমন এক ব্যক্তির মুখমণ্ডল দেখে আমি ধাক্কা খেয়েছি।
একজন নারী সাংবাদিকের কাছ থেকেই তিনি প্রশ্ন গ্রহণ করছিলেন। জবিহুল্লাহ মুজাহিদ এমন একটি আসনে বসে সাংবাদিকদের প্রশ্ন নিচ্ছিলেন, যেটি কয়েক দিন আগেও দাওয়া খান মিনাপালের অধিকারে ছিল। মিনাপাল ছিলেন আফগানিস্তানের গণমাধ্যম ও তথ্য কেন্দ্রের পরিচালক। চলতি মাসের শুরুতে তালেবানের হামলায় তিনি নিহত হন।
মুজাহিদকে স্বচক্ষে দেখা নিয়ে অনেক সাংবাদিকই টুইটারে পোস্ট করছিলেন। বিবিসির প্রবীণ সাংবাদিক জন সিম্পসন তাকে একজন তুলনামূলক উদার ও হাসিখুশি মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেন।
কিন্তু বহু বছর ধরে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, তালেবানের মুখপাত্র একজনেরও বেশি হতে পারে। সাংবাদিক লিস ডোসেট বলেন, আমরা মনে করে আসছিলাম, জবিহুল্লাহ নামটি বানানো। হয়তো আরও অনেক জবিহুল্লাহ নাম আছে। কিন্তু আজ আমরা সবাই জবিহুল্লাহ মুজাহিদকে গ্রহণ করে নিয়েছে।
আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেছেন, তাদের সব বিরোধীকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষ। সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন আমাদের নেতা। ইসলামি আইন অনুসারে নারীদের কাজের সুযোগ দেওয়ায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চাওয়ার দাবি করে জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, আমরা দেশের ভিতরে কিংবা বাইরে কোনো শত্রু চাই না।
গত ২০ বছর ধরে তালেবানের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসা জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেই ক্যামেরার সামনে এলেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী আর ক্যামেরার সামনে তিনি বলেন, ২০ বছর সংগ্রামের পর দেশকে আমরা মুক্ত করতে পেরেছি, বিদেশিদের বহিষ্কার করেছি। পুরো জাতির জন্য আজ একটি গৌরবের মুহূর্ত।
মুখপাত্র বলেন, আমরা কাবুলে বিশৃঙ্খলা দেখতে চাইনি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল কাবুলের গেটে থামার, যাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়।
এছাড়া তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবদুল গনি বেরাদার দুই দশক পর তার নিজ দেশ আফগানিস্তানে পা রেখেছেন। বছর তিনেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে পাকিস্তানের কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন।
তালেবানের আফগান রাজধানী কাবুলের দখলের পর মঙ্গলবার তিনি দেশটিতে পৌঁছান। নতুন ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তানের নেতা কে হবেন; তা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও তালেবান আন্দোলনের সবচেয়ে পরিচিত মুখের একটি বেরাদার।
তিনি যখন কান্দাহারে পৌঁছান, তখন প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে বসেছেন তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ। তবে তালেবানের আধ্যাত্মিক নেতা মোল্লাহ হাবিবুল্লাহ আকুনজাদাকে এখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
১৯৯৪ সালে তালেবানের প্রতিষ্ঠাকালীন চার নেতা নেতার অন্যতম বেরদার। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি নেতৃত্বের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে মার্কিন আগ্রাসন ও তালেবানের পতনের পর তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান।