নিজের তৈরি হেলিকপ্টারে প্রাণ গেল ইসমাইলের (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১৩ আগস্ট ২০২১ : এ যেন অনেকটা প্রখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক মেরি শেলি রচিত উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ এর কাহিনী! উপন্যাসে গবেষক ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন নিরলস গবেষণার মাধ্যমে একটি বিশেষ ধরনের বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে সমর্থ হন। কিন্তু সেই ‘আবিষ্কার’ই কাল হয় তার। ওই ‘ভয়ঙ্কর দানবে’র হাত একে একে প্রাণ হারান গবেষকের সহকারী, আয়া, ভাই, বাগদত্তা ও পরিবারের সবাই। শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারাতে হয় ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকেও।

এবার বাস্তবেও এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্রে। নিজের বানানো হেলিকপ্টার উড়াতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ইসমাইল শেখ নামের এক যুবক।

ইসমাইল শেখ স্বপ্ন দেখেছিলেন- নিজের বানানো হেলিকপ্টারে করে আকাশে উড়বেন, মন জয় করবেন বিশ্ববাসীর। নিরলস চেষ্টায় বানিয়েও ফেলেছিলেন স্বপ্নের হেলিকপ্টার। তবে সেই হেলিকপ্টারের আঘাতেই তার প্রাণ গেলো তার। নিজের বানানো হেলিকপ্টারের ব্লেডে গলা কেটে মৃত্যু হয়েছে স্কুল পালিয়ে গবেষণায়রত এই যুবকের।

পড়াশোনায় ভীষণ অমনোযোগী ছিলেন ইসমাইল শেখ। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেন মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত গ্রাম ফুলসাওয়াঙ্গির এই ‘বিজ্ঞানী’। স্কুল ছেড়ে কাজ শুরু করেন ভাই মুসাভিরের ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে। সেখানে কাজ করতে করতেই ইসমাইল নানা ধরনের আসবাব বানানোর কৌশল শিখে ফেলেন। তবে তার লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। ভাবতেন এমন একটা কিছু করবেন যাতে ফুলসাওয়াঙ্গির নাম সারা বিশ্বে আলোচিত হয়।


ইসমাইল লক্ষ্য স্থির করেন, একটা মিনি হেলিকপ্টার বানাবেন। এক সিটের হবে সেই কপ্টার। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। দোকানের কাজের ফাঁকে একটু একটু করে তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া শুরু করেন। ইসমাইলের প্রিয় সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’ এর র‍্যাঞ্চো ছিল তার জীবনের আদর্শ। সেই আদর্শকেই অনুসরণ করে নিজের মিশনে নেমে পড়েন ইসমাইল।

তার স্বপ্নের হেলিকপ্টারকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করেন ইউটিউব দেখে দেখে। টানা দুই বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলেন এক সিটের একটি হেলিকপ্টার। মারুতি ৮০০ গাড়ির ইঞ্জিন লাগিয়েছিলেন তাতে। সবই ঠিকঠাক ছিল, শুধু অপেক্ষা ছিল উদ্বোধনের। আর এজন্য ভারতের স্বাধীনতা দিবসকেই বেছে নিয়েছিলেন ইসমাইল।

কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার আগেই মঙ্গলবার নিজের বানানো হেলিকপ্টারের আঘাতে প্রাণ গেলো ইসমাইলের। হেলিকপ্টার চড়ে আকাশে উড়াল দেওয়া হলো না তার।

ইসমাইলের বন্ধু শচীন উবালে জানান, নিজের আবিষ্কার নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন ইসমাইল। মঙ্গলবার রাতে হেলিকপ্টারটি পরীক্ষা করছিলেন তিনি। গ্রামের অনেক মানুষ উপস্থিত হয়েছিল তা দেখতে। হেলিকপ্টার চালু করেছিলেন ইসমাইল। হঠাৎ হেলিকপ্টারের পেছনের পাখা মূল পাখায় আঘাত করে। মূল পাখার ব্লেড ভেঙে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইসমাইলের গলায় আঘাত করে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয় ইসমাইলের। ওই দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
ইসমাইলের ডাকনাম মুন্না। তাই ভালোবেসে তার হেলিকপ্টারের নাম দিয়েছিলেন ‘মুন্না হেলিকপ্টার’।

সূত্র: আনন্দবাজার