ছেলের সহায়তায় নারী কণ্ঠে কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিতেন বাবা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১৩ আগস্ট ২০২১ : ভিআইপিদের নম্বর সংগ্রহ করে অ্যাপের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হতো ছেলে। আর বাবা আত্মীয় সেজে নারী কণ্ঠে কথা বলতেন। আলাপের এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে অসুস্থতাসহ নানা সমস্যার কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিত অর্থ।

এভাবে বাবা-ছেলে মিলে ৭ বছর ধরে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। আর প্রতারণার অর্থ পুরোটাই ব্যয় করেছে ইয়াবা সেবনে। এমনই প্রতারক বাবা-ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জলজ্যান্ত পুরুষ, কথা বলছেন নারী কণ্ঠে। তাও আবার ভিআইপিদের সঙ্গে। রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার ৫২ বছর বয়সী আলী আকবর তৈরি করতেন বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের প্রথম সিরিজের নম্বর। এরপরই নিজের ছেলেকে দিয়ে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে নিশ্চিত হতেন ব্যবহারকারীর পরিচয়। প্রতারণার অভিনব কৌশলে নিকটাত্মীয়দের চিকিৎসার কথা বলে ফাঁদে ফেলতেন সমাজের বিত্তবানদের।

প্রতারক আলী আকবর হীরা নারীকণ্ঠে বলতেন, আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ, এখন সিজার অপারেশন হওয়ার পর রিলিজ দিয়েছে কিন্তু কিছু টাকা বাকি আছে এজন্য আমাকে হাজার পাঁচেক টাকা ধার দিলে ভালো হতো।

আকবরের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যাও কম নয়। করোনায় সদ্য বাবা-মা হারানো ধনাঢ্য এক গৃহিণীর সরলতার সুযোগে অর্থ নিয়েছেন কয়েকধাপে।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমার কাছে কণ্ঠস্বরটা আমার পরিচিত এক আত্মীয়ের মতো মনে হলে তখন বললাম যে ওমুক। তখন সাথে সাথেই বললো এতোক্ষণে চিনলে এই-সেই করে অভিনয় করল। পরে আমাকে বলল তোমাকে ফোন করেছি আমার একটু সমস্যা, আমি বাইরে আছি আমার কিছু টাকা দরকার।

ভুক্তভোগী ওই নারী আরও জানান, সাথে সাথে আবার আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমি মনে হয় পাঁচ হাজার টাকার কথা বলেছিলাম এটা ভুল হয়েছে; ১০ হাজার টাকা লাগবে।

প্রতারণার শিকার আরেক  ব্যক্তি বলেন, তুমি যদি কিছুক্ষণের মধ্যে আমাকে ৩ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠাও তাহলে আমার বেশ উপকার হয়।

পুলিশ বলছে, সিনেমার একটি দৃশ্যে অনুপ্রাণিত হয়েই কণ্ঠ পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষকে ঠকানোর কৌশল রপ্ত করেন আকবর ও তার ছেলে। কখনো কখনো আশ্রয় নেন বিশেষ সফটওয়্যারের।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (ডিবি) উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, ভিআইপি নাম্বার যেমন ০১৭১১, ১১১ এভাবে নিয়ে সে নিজে নিজে নাম্বার বসাত। এ নাম্বারগুলো পরে ইমোতে নিয়ে কথা বলতো। সেখানে ব্যবহারকারীর পরিচিত পেয়ে গেলে পরে সে নাম্বারে ফোন করে। তারপর তার আবেদনে কেউ সাড়া দিত তখন পরে সে আবার আরেকটা অ্যামাউন্ট চাইতো।

সাত থেকে আট বছরের প্রতারণাকালে আকবর কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও পুরোটাই খুইয়েছেন মাদকের ধোঁয়ায়, বলেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

সঠিকভাবে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই মোবাইল ব্যাংকিংসহ সব ধরনের লেনদেনের পরামর্শ পুলিশের। প্রতারক আলী আকবরের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলাগুলো খতিয়ে দেখছে পুলিশ।