ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আদালত প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১ : ডিজিটাল প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ইশরাত রফিক ঈশিতা ও তার সহযোগী শহিদুল ইসলাম দিদারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষক, বিশিষ্ট আলোচক এবং কূটনীতিক এমন নানা ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার ইশরাত রফিক ঈশিতা ও তার সহযোগী শহিদুল ইসলাম দিদারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) তাদের দুদিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে তাদের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদ তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে সোমবার (৯ আগস্ট) প্রতারণা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের পৃথক মামলার ছয়দিনের রিমান্ড শেষে তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর শাহআলী থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন-পূর্বক তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা তাদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে থক দুই মামলায় গত ২ আগস্ট ইশরাত রফিক ঈশিতা ও শহিদুল ইসলামকে তিন দিন করে ছয় দিন করে রিমান্ডে পাঠানো হয়।
গত ১ আগস্ট র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে (সেশন ২০০৫-২০০৬) এমবিবিএস সম্পন্ন করেন ইশরাত রফিক ঈশিতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের নাম ‘কমিউনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশ’ সিবিএমসি। ২০১৪ সালে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যোগ দেন ঈশিতা। তবে চার মাসের মাথায় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হন তিনি। এরপরই শুরু হয় তার বহুমুখী প্রতারণা।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এমবিবিএসের বাইরে তার আর কোনো ডিগ্রি না থাকলেও তিনি নিজেকে চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবেও পরিচয় দেন তিনি।
এমপিএইচ, এমডি, ডিও-সহ নানা ভুয়া বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি ব্যবহার শুরু করেন ঈশিতা। ভুয়া ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবেও বিভিন্ন মতবাদ প্রচার করতে থাকেন তিনি। চিকিৎসাবিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ, আর্টিকেল বা থিসিস পেপারের ভুয়া প্রকাশনাও ব্যবহার করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, তিনি নিজেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবেও পরিচয় দেন। করোনাকালেও থামেনি তার প্রতারণা। দুই দফায় ৬০ চিকিৎসককে তিনি সেমিনারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেন। শেষমেশ ধোপে টেকেনি তার বহুমুখী প্রতারণা। পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার হন ভুয়া বিশেষজ্ঞ ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার ভুয়া প্রতিনিধি পরিচয় দেওয়া বহুমুখী প্রতারক ইশরাত রফিক ঈশিতা (আইপিসি)। ঈশিতার বাবার নাম খন্দকার রফিকুল ইসলাম। ঢাকার কাফরুলে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।
র্যাবের ওই অভিযানে ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, ভুয়া সিল, ভুয়া সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, ৩০০ পিস ইয়াবা, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।