একসময়ের মাদকাসক্তরাই অনেক নিরাময়কেন্দ্রের মালিক (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,০২ জানুয়ারি ২০২১ : নিয়মনীতির তোয়াক্কা ছাড়াই চলছে রাজধানী ও আশপাশের মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্র। যেখানে সেখানে বাসা বা জায়গা ভাড়া নিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একসময়ের মাদকাসক্তরাই চিকিৎসার নামে রীতিমতো খুলে বসেছেন ব্যবসাকেন্দ্র। পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হলেও যখন-তখন মারধর, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এমনকি নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগও রয়েছে এসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।

কিন্তু নিরাময়কেন্দ্রে এসব নির্যাতনের কথা পরিবারকে বললে পরিবার ভেবেছে সবই মিথ্যা কথা। নেশা করতে না পেরেই হয়তো ছেলে পালানোর ছুতো খুঁজছে। কারণ ‘বিশ্বাস’ নামক বিষয়টি পরিবারের কাছে তত দিনে হারিয়েছেন ছেলে। কিন্তু পালানো ছুতো, নাকি নির্যাতন তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে।

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা মানসিক ও মাদকাসক্ত হাসপাতালে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমনই একজনের সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের। ভুক্তভোগী জানালেন, ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না। খুবই অপরিষ্কার জায়গা ছিল। এমনকি তাদের কথা না শুনলে মারধরও করত।

নির্যাতনের এই গল্পের সত্যতা যাচাইয়ে ওই কেন্দ্রের খোঁজে নামে সময় সংবাদ। মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে গিয়ে দেখা যায় বাসা ভাড়া নিয়ে চলছে কেন্দ্রটি। নিয়মানুযায়ী একজন মাদকাসক্তের চিকিৎসার জন্য পরিচ্ছন্ন ও খোলামেলা পরিবেশ প্রয়োজন। কিন্তু এই কেন্দ্রের পুরোটাতেই স্যাঁতস্যাঁতে। ঘরতো দূরের কথা বারান্দা কিংবা বাথরুম কোথাও দিনের আলো পৌঁছে না।

তবে, মারধরের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে মালিকের দাবি, ভুল করেও আমরা কারো গায়ে কখনো হাত দেইনি। বর্তমানে এখানে মাদকাসক্ত রোগী আছেন মাত্র একজন, বাকিরা মানসিক রোগী।

মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় নিউ তরী নামে আরেকটি কেন্দ্র আছে। কয়েক বছর আগে এক ব্যবসায়ীর পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে তার পরিবার তাকে আটকে রাখে নিউ তরীতে। আদালতের হস্তক্ষেপের পর স্ত্রী গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনে এই কেন্দ্র থেকে। সে ঘটনায় কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারো চালু হয় কেন্দ্রটি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঘুষ দিয়ে কেন্দ্রটি আবার চালু করা হয়েছে বলে জানালেন মালিক। বলেন, বর্তমানে কাজ করতে গেলে টাকা দিতে হয়। টাকা ছাড়া কোন টেবিল থেকেই কাজ করে নিয়ে আসা যায় না।

নিয়ম অনুযায়ী, নিরাময়কেন্দ্রগুলো হতে হবে আবাসিক এলাকায়। কিন্তু সাভারের মূল রাস্তার পাশে বাণিজ্যিক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তির পথ নামের কেন্দ্রটি। এখানকার মালিক একসময় নিজেই ছিলেন নিরাময়কেন্দ্রে। এসব কেন্দ্রকে ছোট আকারের জেলখানা বললেও কম বলা হবে। ক্যামেরাতো নয়ই পরিবারও কিছু কেন্দ্রের ভেতরে সন্তানকে ভর্তি করতে এসেও ঢুকতে পারেন না।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি নিরাময় কেন্দ্র মাত্র ৪টি। অন্যদিকে শুধু রাজধানীতেই বেসরকারি অনুমোদিত নিরাময়কেন্দ্র ১০৫টি। তবে অনুমোদনহীন কেন্দ্র কত তা কেউ জানে না।

সম্প্রতি আদাবরে একটি নিরাময় কেন্দ্রে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। অভিযানে বন্ধ হয় ৮টি কেন্দ্র। কিন্তু যেগুলো চলছে তার বেশিরভাগই মানছে না গাইডলাইন। এমন কথা স্বীকারও করছে কর্তৃপক্ষ।

তবে, এসব অবৈধ কেন্দ্রের খোঁজ চলছে বলে জানালেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার। বলেন, আমরা কখনোই চাই না কোথাও ভুল চিকিৎসা হোক। যেসব কেন্দ্র অনিয়ম করছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে বন্ধ করা হবে বলেও জানান তিনি।

আর অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিরাময়কেন্দ্রের নামে যেগুলো চলছে, সেসবেরই আগে চিকিৎসা প্রয়োজন।

একবার মাদকাসক্ত সন্তানের জন্য হয়রানি, আবার নিরাময় করতে গিয়ে কেন্দ্রগুলোর কাছে দ্বিতীয় দফা হয়রানির শিকার হচ্ছেন সন্তান ও পরিবার। এই অবস্থা বন্ধে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি।