ভালোটা দেখছেন-খারাপটা দেখেন নাই, এমপি বাহারের অডিও ফাঁস (অডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কুমিল্লা প্রতিনিধি,২৫ ডিসেম্বর : পাহাড় কাটার অভিযোগে ‘পছন্দের’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করায় পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালককে হুমকি দিয়েছেন কুমিল্লার সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে উপপরিচালক শওকত আরা কলিকে ১৫ দিনের মধ্যে কুমিল্লা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি।

এর আগে উপপরিচালককে ফোন করে ‘ননসেন্স’ বলে গালিও দেন এমপি। একপর্যায়ে তিনি বলেন, কুমিল্লায় থাইকা ক্ষমতার অপব্যবহার করার কোনো সুযোগ নাই। আমার ভালোটা দেখছেন আপনে, খারাপটা তো দেখেন নাই। এরপর তিনি আবার বলেন, ‘খুব ক্ষমতা না? …বলেন না আপনার অনেক ক্ষমতা। তালা মেরে দেব অফিসে গিয়ে আমি… বেয়াদব কোথাকার।’ দুই মিনিট ১৩ সেকেন্ডের এ কথোপকথন রেকর্ড সময় সংবাদের কাছে পৌঁছেছে।

কথোপকথনের বিষয়টি নিয়ে এমপি বাহারকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

হুমকি দিয়ে সংসদ সদস্যের অডিও ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হুসাইন বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও রিপোর্টের ভিত্তিতেই ঠিকাদারকে নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে টেলিফোনে জানান তিনি।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা বর্ধিতকরণের একটি প্রকল্পে এক লাখ ১৪ হাজার ৩৩০ ঘনফুট মাটি কাটার অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড ও মেসার্স হক এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে। কিন্তু পাহাড় কাটার কোনো অনুমতি নেয়নি তারা। আবার সওজ বিভাগও তাদের পাহাড় কাটার বিষয়টি জানা নেই বলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানায়। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিবেদন পাঠান কুমিল্লার উপপরিচালক। প্রতিবেদনটি হাতে পেয়ে উপপরিচালককে কল করেন এমপি বাহার। কথার একপর্যায়ে উপপরিচালককে ১০ মিনিটের মধ্যে তার অফিসে আসার নির্দেশ দেন তিনি। উপপরিচালক কিছুক্ষণ পর সহকারী পরিচালক ও পরিদর্শককে নিয়ে এমপির অফিসে যান। সেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনসহ অনেকের সামনে ফের খারাপ ব্যবহার করেন এমপি।

এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শওকত আরা কলি।

তিনি বলেন, ‘ভাই, যা হয়েছে থাক; এ ব্যাপারে রিপোর্ট করার দরকার নেই।’

দুই মিনিট ১৩ সেকেন্ডের সেই কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো:

ডিডি: হ্যালো স্যার, ডিডি পরিবেশ অধিদপ্তর
এমপি: হ্যাঁ, আপনি যে রিপোর্টটা দিলেন…
ডিডি: স্যার।
এমপি: আপনি যে রিপোর্টটা দিলেন, আপনি আমার সাথে কথা বলেছিলেন? ওই যে লালমাই রাস্তা নিয়ে
ডিডি: জি স্যার, জি স্যার।
এমপি: রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে নিয়ে দেননি কেন? রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের বিরুদ্ধে লেখেন নাই কেন? আমাদের বিরুদ্ধে লিখলেন কেন?
ডিডি: না না, আমাদের রিপোর্টে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের বিরুদ্ধেও লেখা হয়েছে স্যার…
এমপি: না না, লেখেননি, আপনার রিপোর্টটা আমার হাতে আছে, আপনার রিপোর্টের ভিত্তিতে আপনি বলেছেন, আমরা এক লাখ ১৪ হাজার ৩৩০ ঘনফুট মাটি কেটে ফেলছি, এই মেজারমেন্টটা আপনি কীভাবে করলেন আমাকে ছাড়া?
ডিডি: স্যার আমরা মেজারমেন্ট স্যার…
এমপি: আপনি কীভাবে করলেন আমাকে ছাড়া? আমি তো একটা পক্ষ, আপনি একটা পক্ষ
ডিডি: স্যার…।
এমপি: আমি ছাড়া আপনি এককভাবে মেজারমেন্ট করলেন কীভাবে? আমার সিগনেচার নেবেন না? ক্ষমতার অপব্যবহার করতেছেন আপনি।
ডিডি: স্যার…।
এমপি: কুমিল্লায় থাইকা ক্ষমতার অপব্যবহার করার কোনো সুযোগ নাই, আমার ভালোটা দেখছেন আপনে, খারাপটা তো দেখেন নাই।
ডিডি: স্যার…।
এমপি: স্যার কী? ননসেন্স কোথাকার? আপনি এটা মেজারমেন্ট করার সময় তো আমাকে রাখতে হবে। আপনি কতটুকু কাটছেন, এটা তো একসাথে মেজারমেন্ট করতে হবে।
ডিডি: স্যার…।
এমপি: খুব ক্ষমতা না? …বলেন না আপনার অনেক ক্ষমতা। তালা মেরে দেব অফিসে গিয়ে আমি…বেয়াদব কোথাকার।
ডিডি: না স্যার…।
এমপি: আপনি আমার অফিসে আসেন, ১০ মিনিটের মধ্যে আপনি আমার অফিসে আসেন, কি বলছি বুঝছেন?
ডিডি: কখন আসব আজকে স্যার…
এমপি: ১০ মিনিটের মধ্যে আসেন, ১০ মিনিট সময় দিলাম, ১০ মিনিট।